বদরুল আলম মজুমদার

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

নির্বাচনী মাঠে জামায়াত নেতারা

লক্ষ্য ১০০, দাবি ৩৫ অনড় ২০ আসনে

বিএনপির অনত্যম মিত্র জামায়াত নির্বাচন নিয়ে পজেটিভ চিন্তা করছে। নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত রাখলেও স্বতত্র বা অন্য কোনোভাবে নেতারা নির্বাচনের মাঠে থাকতে চান। তারা মনে করেন, আগামী নির্বাচনই হচ্ছে তাদের স্বরূপে ফেরার মিশন। এ মিশনের প্রধান লক্ষ্য-যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে বিশ দলীয় জোটকে। আগের অবস্থায় ফিরে যেতে জামায়াতের একমাত্র ভরসা মিত্রের প্রধান দল বিএনপির ওপর। তাই দলটির বেশির ভাগ নেতা প্রকাশ্যে জামায়াতের বিরোধিতা করলেও টুঁ শব্দও করছে না জামায়াত। তাছাড়া দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের ‘ভেতর যোগাযোগ’ সম্পর্ক এখনো স্বাভাবিক।

জামায়াত নেতারা মনে করছেন, তাদের অন্যতম ভরসার জায়গা বিএনপির শীর্ষ দুই কান্ডারীসহ স্থায়ী কমিটির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। যারা একটা সময় সরাসরি জামায়াতের পক্ষ নিয়ে বিএনপিতে প্রভাব বিস্তার করেছেন। জামায়াতকেও করেছেন শক্তিশালী।

অতীতে দেখা গেছে, বিএনপি নেতাদের কেউ জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেতেন না। যখনই জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করতেন দলের ভেতর-বাইরে প্রচন্ড চাপে ফেলা হতো তাদের। বর্তমানে জামায়াত আগের অবস্থায় নেই। তাই বেশির ভাগ বিএনপি নেতা জামায়াতের বিপক্ষে সরাসরি কথা বললেও সময়ের কারণে সয়ে যাচ্ছে জামায়াত। এমনকি নির্বাচনের মাঠে যে ৩০-৩৫টি আসনে জামায়াত সব সময় নিজেদের প্রাধান্য ধরে রেখেছিল, সেখানেও নিগৃহীত হচ্ছেন তারা। তার পরও সঠিক সময়ের অপেক্ষায় এখনই প্রকাশ্যে কথা না বলে ভেতরে ভেতরে ঠিকই নির্বাচনের পথে হাঁটছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। ৩৫টির দাবি থাকলেও সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে ২০টি আসন পেলেও সন্তুষ্ট থাকবে দলটি। জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জামায়াতের কার্যকরী পরিষদের এক সদস্য পরিচয় গোপন করে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ৯১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত সব জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত প্রায় ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিল। আর সবকটি নির্বাচনেই কমপক্ষে ৫০টি আসনে জয় এবং জয়ের খুব কাছে যেতে সক্ষম হয়। সেই হিসাবে, জোট ছাড়া যেকোনো অবস্থাতে জামায়াত ২০টির বেশি আসনে জয়লাভ করতে সক্ষম। তাই নির্বাচন কমিশন তাদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিলে জামায়াত ৫০টি আসনের দাবি জানাবে বিএনপির কাছে। আর যদি বর্তমান অবস্থায় জামায়াতকে নির্বাচনে যেতে হয়, তাহলে স্বতন্ত্র বা অন্য যেকোনো উপায়ে ২০টি আসনে নিশ্চিত নির্বাচন করবেন নেতারা। এমন প্রস্তুতি রয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় পর্যায়ে।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনে যাওয়ার লক্ষ্যে জামায়াত নিজেদের সোর্স ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ে জরিপ পরিচালনা করে। গত তিনটি নির্বাচন থেকে জামায়াত নিজেদের প্রভাব আছে-এমন ১০০ আসন নিয়ে কাজ করছে গত বিশ বছর থেকে। সেই ১০০ আসনের মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচনে ৩৫টি আসনে জোটগত মনোনয়ন নিতে সক্ষম হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে জামায়াতের অবস্থা আগের মতো নেই-এমনটা মানতেও নারাজ দলটির নেতারা। তারা মনে করেন, বিগত দিনের স্থানীয় নির্বাচনে জামায়াত ভালো করেছিল। যেসব নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে, সেগুলোতে জামায়াত বিএনপি থেকেও ভালো ফল করেছে। সুতরাং বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সরকারি দলের ভাষায় কথা বলছে। মানুষ জামায়াতকে ফেলে দেয়নি। বরং যুদ্ধাপরাধের দায়ে নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুকেও ভালোভাবে নেয়নি। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে উত্তরবঙ্গের স্থানীয় নির্বাচনগুলোর সর্বশেষ ফল।

২০টি আসনের টার্গেট নিয়ে জামায়াত নেতারা শতাধিক আসনে তাদের প্রার্থীদের মাঠে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে কোনো কোনো এলাকায় প্রার্থী সংকট থাকলেও মাঠপর্যায়ের নেতারা নির্বাচনে অংশ নেবেন-এমন বার্তা জনগণের মাঝে দিয়ে যাচ্ছেন। আগের মতো আন্দোলন করে, শক্তি দেখিয়ে জামায়াত তাদের অবস্থান জানান দিতে রাজি নয়। দলটির বিরুদ্ধে অতিমাত্রায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দোষারোপ ক্রমাগতভাবে উঠতে থাকায় সেই কৌশলের পরিবর্তন এনেছে দলটি। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যও জামায়াতের মার দাঙ্গা স্বভাবের চিরচেনা রূপকে মুছতে চায় তারা। তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে মন জয়ের চেষ্টায় কাজ করছে দলটি। এসব কাজের মধ্যও আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। প্রকাশ্যে কিছু করা থেকে বিরত রয়েছেন তারা। এখন দলের প্রতিটি কর্মীই ‘টার্গেট’ভিত্তিক কাজ করছেন। অর্থাৎ কর্মীরা তাদের আশপাশে লোকজনকে টার্গেট করে জামায়াতের রাজনীতির দিকে টেনে আনছেন। এ কাজে কোনো ব্যক্তিকে কাছে টানতে দুই-তিন বছর সময় লাগলেও সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত পিছু হটছেন না দলটির মাঠপর্যায়ের কর্মীরা।

নির্বাচন বিষয়ে দলের ঢাকা মহানগরীর এক নায়েবে আমির বলেন, ‘জামায়াত ৩৫টি আসন সামনে রেখে নির্বাচনের মাঠে আছে। যেগুলোতে জোটগতভাবে মনোনয়ন না পেলে কোনো ছাড় দেবে না দল। আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে আমরা প্রস্তুত। কমিশনে আইনি লড়াই করে শেষ পর্যন্ত না পারলেও ভিন্ন মার্কা নিয়ে নির্বাচনে যাবে জামায়াত।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist