নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চাল নিয়ে তর্কে জড়ালেন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা

‘আজ থেকে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমবে’

‘বিশেষ শর্তে’ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এ আশ্বাস দেন তারা। তবে ব্যবসায়ীদের আশ্বাসের কোনো প্রভাব রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চালের পাইকারি ও খুচরা বাজারে গতকাল দেখা যায়নি। দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে গতকালও চালের চড়া দাম ছিল। ব্যবসায়ীদের ঘোষণার বাস্তবায়ন কোন দিন থেকে হবে, তা অধিকাংশ বিক্রেতা জানেন না। চালের মজুদ রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের শাস্তি দিতে গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম চলে। সূত্র জানায়,গতকাল খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চাল নিয়ে ‘তর্কে’ জড়ান মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে দুই মন্ত্রী দাবি করেন, দেশে পর্যাপ্ত মজুদের পরও চাল আমদানি করা হচ্ছে। এরপরও দাম বাড়ার জন্য বাবসায়ীরা দায়ী। বৈঠকের শুরুতে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দেশে চালের কোনো সংকট নেই এবং সারা দেশে প্রায় এক কোটি টন চাল আছে-এ মন্তব্য করে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে উল্টো সরকারের নানা নীতির সমস্যা ও সময়মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।

বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী দেশে এক কোটি টন চাল মজুদ আছে জানিয়ে অভিযোগ করেন, ‘ব্যবসায়ীরা মোটা চাল মেশিন দিয়ে কেটে মিনিকেট বানান।’ এরপর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ব্যবসায়ীদের চালের দাম কমানোর অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘সরকার নিজেও আমদানি করে মজুদ বাড়াচ্ছে। আগামীকাল থেকে ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি স্থগিত করেছি। আগামীকাল থেকে সারা দেশের উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ওএমএস (খোলা বাজারে চাল বিক্রি) কর্মসূচি চালু করছি।’ বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান অর্থ মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কায়কোবাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

চালের দাম কমাতে বৈঠকে ব্যবসায়ীরা সরকারকে ‘বিশেষ শর্ত’ দেন। তারা চাল আমদানি ও পরিবহনে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের অনুমতি চান সরকারের কাছে। সেই সঙ্গে স্থলবন্দর দিয়ে চালবাহী ট্রাকগুলো যাতে দ্রুত আসতে পারে, সে ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমে যাবে।’ বৈঠকে দেশের চালকল মালিকদের সংগঠনগুলোর নেতারা ও খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করেন-এমন কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।

আমাদের ভোলা জেলা প্রতিনিধি জানান, ভোলায় চাল কেনার জন্য ক্রেতাদের তেমন চাপ না থাকলেও মজুদদাররা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চাল মজুদ রেখে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন চালের খুচরা বিক্রেতারা। কয়েক দিন ধরে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে সাধারণ ক্রেতারা। চালের মজুদ রাখার কথা অস্বীকার করে মজুদদাররা জানান, চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

ভোলা শহরের নতুন বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মুছা কালিমুল্ল্যাহ বলেন, বর্তমানে মিনিকেট (৪ কবুতর মজুমদার) চালের কেজি প্রতি বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। গত প্রায় এক সপ্তাহ আগে এ চালের ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি বিক্রি করা হয়েছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। আটাশ চালের ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে এ চালের বস্তা বিক্রি হত দুই হাজার ৪০০ টাকা দরে। আর কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকা দরে। স্বর্ণা চাল ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪৫০ টাকা দরে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৯ টাকা দরে। এক সপ্তাহ ব্যবধানে প্রতি কেজি চাল বেড়েছে অন্তত ১০ টাকা।

ভোলায় চালের বড় বড় মজুদদাররা চালের মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চালের এ খুচরা বিক্রেতা। গতকাল মঙ্গলবার চালের কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি চালের আড়তে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুদ রাখা। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নতুন বাজারের চাল বিক্রেতা ইলিয়াস বলেন, আমরা স্বর্ণা চালের ৫০ কেজির প্রতি বস্তা কিনে আনছি দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল কিনে আনছি ৫০ টাকা দরে। আর বিক্রি করছি কেজি প্রতি ৫২ টাকা দরে। এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অবনী মোহন দাস বলেন, মঙ্গলবার থেকে এখানে ওএমএসের চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরে চালের তিনটি দোকানে অভিযান চালিয়ে দোকান মালিকদের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া বাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. আবদুুস সালাম জানান, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে গাজীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানকালে দোকানে থাকা চাল কেনার রশিদ ও রেজিস্ট্রার খাতা দেখাতে না পারা এবং দোকানে মূল্য তালিকা টানানো না থাকায় চাল ব্যবসায়ী ইসমাইল এন্টারপ্রাইজের মালিক আতাউর রহমান, আকরাম এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আকরাম হোসেন এবং কাসেম স্টোরের মালিক আবুল কাসেমকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অভিযানে গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. আবদুুস সালামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে চাল মজুদদারির বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযানে বাধা, কারাদন্ড

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার চাক্তাইয়ের চালের আড়তে গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আদালতের কার্যক্রমে বাধা দিয়ে আটক এক ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। পরে অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চাল মজুদদারির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে অভিযান শুরু করা হয়। অভিযানে ব্যবসায়ীদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কিছু মানুষ কাজে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা করে। অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে চাল বিক্রি এবং অতিরিক্ত চাল মজুদের অভিযোগে হাজি বদিউর রহমান অ্যান্ড সন্স নামের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. দিদারুল আলমকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৩৮ ও ৪০ ধারায় তিন মাস কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার দায়ে জাহিদুল ইসলাম শাওন নামের একজনকে দন্ডবিধি ১৮৬০-এর ১৮৬ ধারায় এক মাসের কারাদন্ড দেওয়া হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist