আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সু চির কানাডার নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি

রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ না নেওয়ায় কানাডায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি উঠেছে। রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ছাড়াও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিকরা বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কাছে এ দাবি তুলে ধরছেন। ইন্টারনেটে এ বিষয়ে একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন চলছে, যেখানে পাঁচ দিনে প্রায় নয় হাজার মানুষ সই করেছে। গত শনিবার টরন্টোতে কয়েকটি সংগঠন আয়োজিত এমন এক সমাবেশে অংশ নেন খোদ কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। মিয়ানমারের নেত্রী সু চিকে ২০১২ সালে কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।

সমাবেশে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড রাখাইনে চলমান সেনা অভিযান সম্পর্কে বলেন, মিয়ানমার সরকারের অভিযান মূলত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। কানাডার সরকার এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। ফ্রিল্যান্ড জানান, রোহিঙ্কা সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিবের সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে বলেও জানান তিনি।

কানাডার ১৫০ বছরের ইতিহাসে বিশ্বের মাত্র ছয়জনকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছয়জনের মধ্যে সু চিসহ চারজন আবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ী। কানাডার আইনে সাধারণ নাগরিক ও সম্মানসূচক নাগরিকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে দেশটির প্রচলিত আইনে কোনো নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কানাডা বা কানাডার বাইরে সরাসরি বা অন্য কোনো উপায়ে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধে জড়িত হলে, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জোগালে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান রয়েছে।

মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী একটি অংশ সম্প্রতি রাখাইনের পুলিশ পোস্ট ও সেনাক্যাম্পে হামলা চালানোর পর পাল্টা সেনা অভিযানে ইতোমধ্যে চার লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানকার সেনা নির্যাতন, হত্যা ও নারী ধর্ষণের ভয়াবহ বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের মুখে। রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিতেও দেখা গেছে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে। তবে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে সু চি বলে আসছেন, রাখাইনের অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ‘ভুয়া খবর’ আসছে। এ ভূমিকার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছেও সমালোচিত হচ্ছেন সু চি। ইতোমধ্যে তার নোবেল পুরস্কার কেড়ে নেওয়ারও দাবি উঠেছে। কানাডা প্রবাসী আইনজীবী ফয়সল কুট্টি ও ওয়াসিম আহমেদ এক বিবৃতিতে সু চির কানাডীয় নাগরিকত্ব বাতিলের দাবি জানান। তারা বলেন, সু চির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৬ সালের এপ্রিলে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে তিনি অনেক ক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন এবং বিভিন্ন ঘটনা অস্বীকার করে আসছেন। সু চির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে অবিলম্বে তদন্ত শুরু করা উচিত।

যুদ্ধাপরাধসহ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে রোম সনদের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইন পাস করে কানাডা। রোম সনদে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িতদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। ফয়সল কুট্টি ও ওয়াসিম আহমেদ বলছেন, মিয়ানমারে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কানাডার এ প্রতিশ্রুতি পালন করা উচিত। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী হিসেবে কানাডায় আশ্রয় দিতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এদিকে, গত শনিবার টরন্টোতে এক মানববন্ধন থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাবি জানায় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কানাডা শাখা। ‘সু চির কানাডার নাগরিকত্ব বাতিল কর’, ‘রোহিঙ্গাদের বাঁচাও, বিশ্ববিবেক জাগাও’, ‘মিয়ানমারে শিশু হত্যা বন্ধ কর-করতে হবে’, ‘মানবতাকে বাঁচাও, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে পুনর্বাসন কর’, ‘মানবিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান’-ইত্যাদি স্লোগানসংবলিত পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড দেখা যায় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের হাতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist