হাসান শান্তনু

  ২৪ আগস্ট, ২০১৭

শিগগির মেরামত হচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন

ঈদযাত্রায় ট্রেনে এবারও ঘরমুখো মানুষ ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। ট্রেনের বিদ্যমান ও পুরনো সমস্যাগুলোর সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে অতিবৃষ্টি ও বন্যা। এতে দেশের বিভিন্ন এলাকার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব লাইনে ট্রেন চলছে খুব ধীর গতিতে। ঈদের আগে সেগুলোর মেরামত সম্ভব কি না, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান কর্তৃপক্ষ। তার ওপর নতুন করে বন্যা দেখা দিলে ও বৃষ্টি হলে এসব রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকতে পারে।

রেলওয়ে ঈদের অগ্রিম টিকিট ছাড়লেও উত্তরের বিভিন্ন জেলায় যাত্রীরা রেলস্টেশনে গিয়ে জানতে পারছেন, বন্যার কারণে আন্তনগর ট্রেন না-ও চলতে পারে। এ অবস্থায় শঙ্কার মধ্যে আছেন তারা। মাসের শেষার্ধ্বে উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে ঈদের আগে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম থেকে তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তখন দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনের ৬৮ শতাংশ ইঞ্জিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক পথেও ট্রেন চলছে কম গতিতে। গত পাঁচ বছরে রেল খাতে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হলেও ইঞ্জিন কেনা হয়েছে মাত্র ৪৬টি। ট্রেনের ইঞ্জিনের স্বাভাবিক মেয়াদ থাকে ২০ বছর। বর্তমানে রেলওয়েতে ইঞ্জিন আছে ২৭৮টি। এর মধ্যে ১৯০টি ইঞ্জিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে বেশিরভাগ ট্রেনের গতি স্বাভাবিকভাবে অনেক কমে গেছে। দূরপাল্লার প্রায় সব রুটেই পৌঁছাতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি। রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে আরো বেশি সময় লাগতে পারে।

ঈদের আগে উত্তরাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। ঈদ উপলক্ষে রেলওয়ের প্রস্তুতি সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি সংখ্যক ইঞ্জিন, কোচ ও টিকিট দিয়ে যাত্রীসেবা দেবে রেলওয়ে। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন জানান, বন্যায় যেসব এলাকায় রেল লাইন ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেসব এলাকায় রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে পুরোদমে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। দিনাজপুর, রংপুরসহ ওই অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন ও ব্রিজ ২৭ আগস্টের মধ্যে সচল করা হবে।

রেলওয়ে অধিদফতর সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগে ১০০ কিলোমিটার রেলপথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোথাও সিøপার ধসে গিয়ে ১২ থেকে ১৫ ফুট গর্ত হয়েছে। কোথাও ব্রিজ ভেঙে গেছে। রেল কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, ১২৫টির বেশি স্থানে সিøপার ধসে ১০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রেললাইনের পাথর পানির তোড়ে ভেসে গেছে। এসব মেরামতকাজ চললেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। কবে নাগাদ বিপর্যস্ত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে, এটা বলা যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ঈদযাত্রার বিড়ম্বনা নতুন কিছু নয়। টাইম শিডিউল, অপর্যাপ্ত সিট ও বগি সংকট লেগেই থাকে। পুরনো ইঞ্জিনের কারণে যাত্রাপথে ট্রেন চলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। তারওপর এবার বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে এবার ঘরমুখো মানুষকে আরো বড় ধরনের বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে বন্যায় উত্তরাঞ্চলে রেলপথ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ। দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও জামালপুরসহ সাতটি জেলার অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি জায়গায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থার উন্নতি ঘটানো না গেলে এবারের ঈদযাত্রা সুখকর হবে না।

ঈদের আগে অবস্থার উন্নতি ঘটানো যাবে না বলেও মনে করেন রেলওয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। বন্যায় টাঙ্গাইলে রেলপথের একটি সেতুর সংযোগকারী রাস্তা ধসে যাওয়ায় দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে গত রোববার ঢাকা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের সব ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ট্রেন যোগাযোগ শুরু হয়। বিষয়টিকে ঈদযাত্রার আগে ‘বিশেষ সংকেত’ হিসেবে দেখছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।

রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ঈদের আগে ও পরে ক্ষতিগ্রস্ত লাইন, ব্রিজগুলো মেরামত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শুধু ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার জন্য চারটি জেলায় অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঈদ শেষে পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হবে।

জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, এবারের ঈদ যাত্রায় সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন সুবিধা থাকবে। বিশেষ ট্রেনে ঈদের পূর্বে চার দিন ও ঈদের পরে সাত দিন চলবে। তাতে যাত্রীর দুর্ভোগ কমে আসবে।

জানা যায়, আসন্ন কোরবানির ঈদে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিজ গ্রামের বাড়ি ফিরবে মানুষ। রেলের ঈদযাত্রা শুরু হবে ২৭ আগস্ট। সেই লক্ষ্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট কিনতে যাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছেন কমলাপুর রেলস্টেশনে। কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ২৩টি কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। যার মধ্যে দুটি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। গত ১৮ আগস্ট থেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়।

রেলওয়ে অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে অনলাইনে ২৫ শতাংশ টিকেট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ শতাংশ ভিআইপি ও পাঁচ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা ও কর্মচারীর জন্য বরাদ্দ থাকে। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকেট কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে। তবে অনলাইনে যে পরিমাণ টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে, তা খুবই কম। তাই ভুক্তভোগী এসব মানুষের দাবি অনলাইনে টিকেট ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist