প্রতীক ইজাজ

  ২১ আগস্ট, ২০১৭

ফিরিয়ে আনা যায়নি পলাতক আসামিদের

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াল গ্রেনেড হামলায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় চার্জশিটভুক্ত মোট আসামি ৫২ জন। এর মধ্যে বিএনপি সরকারের সময়কার মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এবং জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি

সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। তাদের মধ্যে বর্তমানে ১৮ জন পলাতক, আটজন জামিনে ও ২৩ আসামি দেশের বিভিন্ন কারাগারে।

এদিকে ভয়াবহ এ গ্রেনেড হামলার মামলার বিচারকাজ শেষপর্যায়ে হলেও এখনো পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। বিশেষ করে পলাতক ১৯ আসামির মধ্যে নয়জনের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। তবে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো বলছে, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত পলাতক এসব আসামিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এজন্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কয়েকজন আসামির অবস্থান শনাক্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই ওইসব দেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিচার শেষ করে দ্রুত রায় ঘোষণার উদ্যোগও নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার কয়েকজন আসামির অবস্থান শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এ মামলার সব আসামিকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলাতক আসামিদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক মাওলানা তাজউদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দেশটির সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, এ ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া চুক্তির খসড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংযোজন-বিয়োজন শেষে চূড়ান্ত করে দেশটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন দক্ষিণ আফ্রিকা সম্মত হলেই চুক্তি সই হবে। তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার জন্য এ চুক্তির প্রয়োজন উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকায় মৃত্যুদ-ের কোনো বিধান নেই। এখন দেশটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদ- দেওয়া হবে নাÑএমন অঙ্গীকার করলে তারা তাকে ফেরত দিতে পারে। কিন্তু গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। ফলে রায়ে কী হবে, সে সম্পর্কে আগেভাগেই কিছু বলা যায় না। এ কারণে বাংলাদেশের পক্ষে মৃত্যুদ- হবে নাÑএমন কোনো অঙ্গীকার করা সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে আমরা বন্দিবিনিময় চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছি। সূত্রমতে, তাজউদ্দিন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। এখনো তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতেই আছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছেন তিনি।

এ ছাড়া আইনি জটিলতার কারণে লন্ডন থেকে পলাতক আসামিদের মধ্যে অন্যতম তারেক রহমানকে আপাতত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতক অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিস। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অসহযোগিতা ও নানা আইনি জটিলতার কারণে তাদেরও দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ও এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ বলেন, পলাতক প্রায় সব আসামির বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। যারা বিদেশে রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। অপরাধীরা যখন দেশের বাইরে পালিয়ে যায়, তখনই ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

পলাতক আসামিরা কে কোথায় : পলাতক আসামিদের মধ্যে নয়জনের অবস্থান শনাক্ত করেছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, পলাতকদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন। তাদের মধ্যে হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ প্রথমে কলকাতায় থাকলেও এখন অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য আছে। এ ছাড়া অপর আসামি বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেন আসার সঙ্গে সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে যান। পরে ভারত হয়ে দুবাই ও সর্বশেষ লন্ডনে আছেন বলে জানা গেছে। অবশিষ্ট নয়জনের অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান ইউরোপের কোনো একটি দেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। অবশিষ্টদের মধ্যে জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ারের অবস্থান নিশ্চিত নয়। তবে তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২৩ আসামি কারাগারে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া ২৩ আসামি দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তারা হলেনÑমহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. জাফল, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মো. আব্দুল সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হোসেন ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন, মো. লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মো. আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বি, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া ও আবুল বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার। তাদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর ও আবদুস সালাম পিন্টু কাশিমপুর কারাগারে।

জামিনে আট : আসামিদের মধ্যে আটজন জামিনে আছেন। তারা হলেনÑমো. আরিফুর ইসলাম ওরফে আরিফ কমিশনার, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এএসপি (অব.) আব্দুর রশিদ, এএসপি (অব.) মুন্সী আতিকুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist