নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০১৭

৭ বছরে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি

রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যেটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে তিন হাজার ৪০১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর আমদানিতে মোট চার হাজার ৩৪৯ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। এ সময় আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯ শতাংশ এবং রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

বাণিজ্যে সামগ্রিক এ ঘাটতির পরিমাণ দেশের অর্থনীতির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ ঘাটতি সরকারকে ঋণ নিয়ে পূরণ করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই সময় বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামা করায় এবং পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন অর্থ পাচারের। আমদানির নামে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছে তারা।

আলোচ্য অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) চিত্রে দেখা যায়, পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৫১ কোটি ডলার। এ ঘাটতি আগের অর্থবছরের (২০১৫-১৬) একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা ২৫ শতাংশ বেশি ছিল। এর কারণ হিসেবে ওই সময় বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম বাড়ার কথাও তারা বলেন।

বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ধারাবাহিক কমছে। পাশপাশি আমদানিজনিত চাপে দেশের ভেতরে বেড়েছে ডলারের চাহিদা। এ কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঘটছে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় এক টাকা। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে প্রায় ২ টাকা। এতে রফতানি আয়ের ওপর চাপ পড়েছে আরো বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। ওই সময় প্রবাসীরা এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যা এর আগের পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন আয় ছিল। এখনো এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আয় বৃদ্ধির বিশেষ কোনো সুখবরও নেই। এ ছাড়া প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানিতেও আয় আশানুরূপ হচ্ছে না।

অর্থনীতির গতিধারাতে সাধারণত আমদানি ব্যয় বাড়লে রফতানি আয়ও বাড়ে। কারণ বিদেশ থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি করা হয়, তার একটি অংশ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে রফতানি হয়। অতীতে এমন হয়ে আসলেও এবার ব্যতিক্রম। এর ফলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে গত অর্থবছরে আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। এর আগের অর্থবছর শেষে ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, জ্বালানি তেল এবং খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর এবং তার আগের দুই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। অন্যদিকে রফতানি আয় সে সময় বাড়ছিল বলে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম ৫৫ থেকে ৬০ ডলারে ওঠানামা করায় এবং বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৪৬ কোটি ডলার। এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার; সেটাই ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতির বাইরে পেট্রোলিয়াম, খাদ্যপণ্য প্রভৃতি অনেক বেশি আমদানি হচ্ছে। বিনিয়োগেও শ্লথ অবস্থা দেখা যাচ্ছে। রফতানির ক্ষেত্রে যেভাবে মূল্যপতন হচ্ছে, আমদানির ক্ষেত্রে সেভাবে হচ্ছে না। এতে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে রফতানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিং হচ্ছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে বলে জানান তিনি।

সেবা খাতে ঘাটতি : ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

এফডিআই বেড়েছে : গত অর্থবছরে মোট ২৯৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ১৭০ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের বছরে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে মোট যে এফডিআই আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাণিজ্য ঘাটতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist