নিজস্ব প্রতিবেদক
ষোড়শ সংশোধনী বিতর্ক
ক্ষুব্ধ আওয়ামীপন্থি আইনজীবীদের তিন দিনের কর্মসূচি
বিভিন্ন সময় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আসা আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা তিন দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। আগামী ১৩, ১৬ ও ১৭ আগস্ট দুপুর ১টায় সারা দেশের আইনজীবী সমিতিগুলোতে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ পালিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনটির সদস্য সচিব শেখ ফজলে নূর তাপস। উপস্থিত ছিলেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী নজিবুল্লাহ হিরু।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতি যেসব অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন, তা দেশের আইনজীবী সমাজকে সংক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। রায়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় সংসদ এবং অধস্তন আদালতের ওপর মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন।’
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ চলছে। আওয়ামী লীগ এই রায়ের সমালোচনা করলেও বিএনপি এই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যায়িত করেছে। আলোচিত এই রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ডাকার পর সেখানে দু’পক্ষের আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোল বাধে।
ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে একটি দল ও মহল বিচারাঙ্গনকে বিতর্কিত করার পাঁয়তারা করছে। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে দেশবাসী দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। বঙ্গবন্ধুকে ইঙ্গিত করে তিনি যে বক্তব্য লিখেছেন, তাতে আইনজীবীসহ সারা দেশের মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিষয়টি আমাদের পবিত্র সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত ও মীমাংসিত। ... তিনি জাতীয় সংসদ সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। সংসদকে হেয় করা মানেই গণতন্ত্রকে হেয় করা, জনগণকে হেয় করা। আমরা আইনজীবী অঙ্গন এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
রায়ে যেসব ‘আপত্তিকর, অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, অপ্রাসঙ্গিক’ পর্যবেক্ষণ রয়েছে, সেগুলো স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। তারা বলেন, এমন পর্যবেক্ষণ অসাংবিধানিক ব্যক্তিদের ক্ষমতায় আসার পথকে সুগম করে। ফলে এসব মতামত-পর্যবেক্ষণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে।
রায়ের ব্যাপারে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থনও জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। সংগঠনটি বলেছে, ‘দেশের রাজনৈতিক অপশক্তিকে ইস্যু তৈরি করে দিতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে। যারা দেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়, সরকার ও বিচার বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়, বিচারাঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদেরকে আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে।
"