বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৩ আগস্ট, ২০১৭

শোকাবহ আগস্ট

বঙ্গবন্ধু নেই ৪২ বছর হলো। এ দীর্ঘ সময়, কত চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে দেশ, দেশের মানুষ। সামরিক সরকার এসেছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিএনপি। চেষ্টা চলেছে রাজনীতি, ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে মুছে দিতে বঙ্গবন্ধুকে। মুছে দিতে বাঙালির মন থেকেও। কিন্তু পারেনি। বরং দিন যত যাচ্ছে, ততই বেশি উচ্চারিত হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু-কল্যাণে ও শুভবোধে।

আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধুর জন্য বাঙালির সম্মিলিত শোক, রূপ নেয় শক্তিতে। শোকে আচ্ছাদিত দেশ, দেশের মানুষ, শপথ নেয় নতুন করে, তারই আদর্শে রাষ্ট্রের বিনির্মাণে। মানুষ পথে নামে। গান গায়। সভায়, পথেঘাটে, চায়ের আড্ডায়-কথা বলেন সেই কালরাত নিয়ে। উচ্চারণ করেন শোকগাথা। শ্রদ্ধায় ও বেদনায়-নতুন করে গ্রন্থিত হন বঙ্গবন্ধু, বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা।

বাঙালির সংকটে, শঙ্কায়, এখনো আসেন বঙ্গবন্ধু। কাঁধে রেখে হাত, দেন অভয়। চোখ বুজলেই সামনে এসে দাঁড়ান অবিকল সেই মানুষ-দীর্ঘ দেহ, সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবি, কালো মুজিব কোট, পেছনে আচড়ানো কাঁচা-পাকা চুল, কালো মোটা ফ্রেমের চশমা, হাতে পাইপ। নীতিনৈতিকতার কাছে কখনোই আপস করেননি বঙ্গবন্ধু। বেড়ে উঠেছেন এক ধরনের সরলতা, বিশ্বাস ও দর্শন নিয়ে। বাবা তখন অফিসার্স ক্লাবের সেক্রেটারি। আর ছেলে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের ক্যাপ্টেন। বাবা-ছেলের দুই দলের যেদিন ফুটবল খেলা হতো, খুব উপভোগ করত স্থানীয় মানুষ।

১৯৪০ সাল। বাবার দলকে প্রায় সবগুলো ম্যাচেই হারাল বঙ্গবন্ধুর স্কুল দল। অফিসার্স ক্লাবের টাকার অভাব ছিল না। বাইরে থেকে আসত নামকরা খেলোয়াড়রা। তবু বছরের শেষ খেলায় বাবার দলের সঙ্গে ছেলের দলের পাঁচ দিন ড্র হলো। বঙ্গবন্ধুর দলের তো সবাই ছাত্র, ১১ জনই রোজ খেলতেন। আর অফিসার্স ক্লাব নতুন নতুন খেলোয়াড় আনত। তাই পাঁচ দিন পর খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধুর দলের খেলোয়াড়রা। বাবা বললেন, পরদিনই খেলতে। বঙ্গবন্ধু বললেন, না। সমাধানে গোপালগঞ্জ ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারি ছুটলেন দুজনের কাছেই। অনুনয় করে বললেন, ‘তোমাদের বাপ-ব্যাটার ব্যাপার, আমি বাবা আর হাঁটতে পারি না।’

এগিয়ে এলেন মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রসরঞ্জন সেনগুপ্ত। বললেন, ‘মুজিব তোমার বাবার কাছে হার মান। আগামীকাল সকালেই খেল, তাদের অসুবিধা হবে।’ বঙ্গবন্ধু বললেন, “স্যার, আমাদের সবাই ক্লান্ত। এগারোজনই সারা বছর খেলেছি। সবার পায়ে ব্যথা, দুই-চার দিন বিশ্রাম দরকার। নতুবা হেরে যাব। এ বছর তো একটা খেলায়ও হারি নাই, আর ‘এ জেড খান শিল্ডের’ এই শেষ ফাইনাল খেলা।” কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। প্রধান শিক্ষকের কথা মানতে হলো বঙ্গবন্ধুকে। পরের দিন সকালে খেলা হলো। বাবার দলের কাছে হারল ছেলে বঙ্গবন্ধুর দল, এক গোলে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist