বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় ধর্ষণ ও নির্যাতন
মেয়ে যাবে সেফহোমে, মা ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে
তুফান ও রুমকিরা জেল হাজতে
বগুড়ায় ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে সেফহোমে এবং তার মাকে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার সকালে মা-মেয়েকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর দুপুরের দিকে পুলিশ তাদের বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এবং শিশু আদালতের বিচারক ইমদাদুল হকের এজলাসে হাজির করে। এরপর নির্যাতিত মেয়েটি ও তার মায়ের নিরাপত্তার ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্ত চায় পুলিশ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী জানান, আদালত দুজনের বক্তব্য শুনে নির্যাতনের শিকার সেই শিক্ষার্থীকে রাজশাহীর সেফহোমে এবং তার মাকে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বগুড়ার জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া রিমান্ড শেষে ছাত্রী নির্যাতনের মূল নায়ক তুফান সরকার, তার স্ত্রী আশা সরকার, আশার বোন ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি, তুফানের সহযোগীরা জেল হাজতে রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার ওসি (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ জানান, ১১ দিন চিকিৎসা শেষে মা ও মেয়েকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্যাতিত ছাত্রীকে রাজশাহী বিভাগীয় সরকারি সেফহোমে এবং তার মাকে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়ায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (শজিমেক) উপপরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, ধর্ষিতা ও নির্যাতনে শিকার ওই ছাত্রী এবং তার মা এখন সুস্থ। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় তাদেরকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর পুলিশ তাদের আদালতে নিয়ে যায়।
গত ২৮ জুলাই থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় তাদের শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরই মাঝে গত ১ আগস্ট বিকেলে মেয়েটির ২২ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন বগুড়ার অতিরিক্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যাম সুন্দর রায়।
গত ৪ আগস্ট সেই শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষা প্রতিবেদন হাতে পান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ। প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত মেলার কথা জানান চিকিৎসকরা। পাশাপাশি প্রতিবেদনে মেয়েটি নাবালিকা বলেও উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই কলেজে ভর্তি করার কথা বলে কিশোরীকে কৌশলে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তুফান সরকার। এ ঘটনার পর ২৮ জুলাই দুপুরে ওই এলাকার পৌর কাউন্সিলর রুমকি ও তার সহযোগীরা বিচারের নামে ওই মেয়ে ও তার মাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে মারপিট করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে তুফান সরকার ও তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় ওই কিশোরীর মা বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা সরকার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকি ও তার মা রুমি, মাথামু-নকারী নাপিত জীবন রবিদাসকে গ্রেফতার করে। বগুড়া পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ সদস্যরা মামলায় এজাহারভুক্ত নয়জনসহ মোট ১১জনকে দ্রুত গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এজাহারভুক্ত অপর আসামি শিমুল এখনো পলাতক।
"