আদালত প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জে এক পরিবারে পাঁচ খুন
একমাত্র ঘাতককে পাঁচবার ফাঁসির আদেশ
নারায়ণগঞ্জ শহরের আলোচিত পাঁচ খুনের ঘটনায় একমাত্র আসামির ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। মামিসহ একই পরিবারের পাঁচজনকে খুনের ঘটনায় ঘাতক মাহফুজকে আলাদভাবে পাঁচবার ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। তবে চূড়ান্ত রায় হিসেবে একটি মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে। গতকাল সোমবার নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আকতার দেড় বছর আগের এই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
জানা যায়, গত বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর বাবুরাইল এলাকার ‘আশেক আলী ভিলা’ থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডের শিকার ব্যক্তি হলেন- ঘাতক মাহফুজের মামা শফিকুলের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৪০), ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), শ্যালক মোশাররফ হোসেন মোরশেদ (২৫) ও ছোট ভাই শরীফুল ইসলামের স্ত্রী লামিয়া (২৫)। হত্যাকান্ডের পর শফিকুল ইসলাম নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন, যেখানে ভাগ্নে মাহফুজ এবং কলাবাগানের সুদের কারবারি নাজমা ও শাহজাহানকে আসামি করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর মাহফুজ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি বলেন, চার স্বজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় শিল দিয়ে আঘাত করে এবং একজনকে দেয়ালে মাথা ঠুকে একাই হত্যা করেন তিনি। তদন্ত শেষে গত বছর ৬ এপ্রিল মাহফুজকে একমাত্র আসামি করে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।
জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছেও মনে হয়েছিল একজনের পক্ষে পাঁচজনকে খুন করা অসম্ভব? কিন্তু পরবর্তী সময়ে তদন্তে ও সাক্ষ্য-প্রমাণে আমরা দেখলাম, অপরাধী তীক্ষè বুদ্ধি প্রয়োগ করে একে একে পাঁচজনকে হত্যা করেছে।’
মামলার নথি থেকে জানা যায়, শফিকুল ও শরীফুল একসময় ঢাকার কলাবাগানের এক বস্তিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সেখানেই তাদের ভাগ্নে মাহফুজের সঙ্গে তার মামি লামিয়ার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে দুই ভাইয়ের পরিবার বাসা বদলে নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে চলে যায়। লামিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে হত্যাকান্ডের ১৬ দিন আগে পারিবারিক সালিসে মাহফুজকে জুতাপেটা করা হয় বলে তদন্তের সময় জানিয়েছিল পুলিশ।
আদালতের রায়ে পাঁচজনকে হত্যার জন্য আলাদাভাবে পাঁচবার মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছেন বিচারক। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয় আসামিকে। তবে স্বাভাবিকভাবেই চূড়ান্ত রায় হিসেবে একটি মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে বলে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন জানান।
তিনি বলেন, ‘মামি লামিয়ার সঙ্গে পরকীয়ায় বাধা পেয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটায় মাহফুজ। মোট ৩০ জন সাক্ষীর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদীসহ ২৩ জনের সাক্ষ্য শুনে আদালত রায় দিয়েছেন।’
মামলার বাদী শফিকুল রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত এ রায় কার্যকর করার দাবি জানান। আর নিহত তাসলিমার মা মোরশেদা বেগম আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের পুরো পরিবারকে সে (মাহফুজ) শেষ করে দিয়েছে। তার সাজা যত দ্রুত কার্যকর হবে, আমরা তত খুশি হব।’
অন্যদিকে, আসামি মাহফুজের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, ‘আইনজীবী হিসেবে আসামিপক্ষকে যতটুকু সম্ভব আইনগত প্রতিকার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তাতে আসামি সন্তুষ্ট নন। তিনি প্রকৃত ন্যায়বিচার পাননি। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’
"