নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

উবারের ভাড়া নিয়ে নতুন ভোগান্তি

ক্রমেই বেড়ে চলেছে রাজধানীর আধুনিক পরিবহন (ট্যাক্সি) প্রতিষ্ঠান উবারের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে যাত্রীদের মধ্যে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রাইভেট কারে স্মার্টফোনভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে সেবাদান করছে উবার। এতে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেক গাড়ির মালিক ও চালক। অনেকে নিরাপত্তা ও স্বস্তিতে দ্রুত গন্তব্যে যেতে এই সেবাটি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু ইতোমধ্যেই নানা অনিয়ম, ভোগান্তি ও অসংগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে উবারের বিরুদ্ধে।

উবারের কয়েক যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। এমনকি উবারের চালক দ্বারা নারীযাত্রী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। ওই সংবাদ প্র্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সেবাগ্রহণ করে কিছু যাত্রী অপরাধমূলক কাজে জড়িয়েছেন বলেও জানা গেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, একই রুটে ভিন্ন ভিন্ন হারে ভাড়া আদায় করছে উবার। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া, গাড়ি ব্যবহারের সময় ও বেইজড চার্জ হিসাব করে যে ভাড়া হওয়ার কথা, উবারের দেওয়া ভাড়ায় ব্যাপক গরমিল পাওয়া যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী যাত্রী জানান, তিনি একবার উবারের গাড়িতে বাসায় যান। যাত্রাপথ সর্বসাকুল্যে তিন থেকে চার কিলোমিটার ছিল। সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা, সেখানে উবারের অ্যাপস ভাড়া দেখায় প্রায় ৬০০ টাকার কাছাকাছি। উবারের চালকের কাছেও বিষয়টি বোধগম্য হয়নি। পরে চালক ২০০ টাকা নিয়ে খুশি মনে যাত্রীকে বিদায় করেন।

উবারের কাস্টমার কেয়ারকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তারা জানান, উবার অ্যাপস যে ভাড়া নির্ধারণ করছে, তাই পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু বাড়তি ভাড়া কেন দেওয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে কাস্টমার সার্ভিস থেকে বলা হয়, ‘এই ভাড়া পরিশোধ করা না হলে আপনার কাস্টমার অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দেওয়া হবে।’ কাস্টমার কেয়ার সেবাদাতার কাছ থেকে এরূপ আচরণে হতবিহ্বল হয়ে যান ওই যাত্রী।

অপরদিকে আরেক ভুক্তভোগী যাত্রী জানান, সময় সাশ্রয় এবং স্বস্তিতে চলাফেরা করার জন্য তিনি প্রায়ই উবার ব্যবহার করে থাকেন। তিনিও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, যানজটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়া সত্ত্বেও যে ভাড়া আসার কথা, এর বিপরীতে প্রায় দ্বিগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৬০০ টাকার ভাড়া আসছে ১০০০ টাকার মতো। মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত ভাড়া প্রায় ৮৫০ টাকার কাছাকাছি। যানজটের বিষয়টি হিসাবে নিলেও ১৫০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা হওয়ার কথা নয়।

অপর এক যাত্রী জানান, আনুমানিক ভাড়া হিসাব করে উবার ব্যবহার করেছিলেন। গন্তব্য স্থানে পৌঁছে তার চেয়ে প্রায় ৩০০ টাকা বেশি ভাড়া নির্ধারণ করে উবার। যা মেনে নেওয়া যায় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও উবারের বাড়তি ভাড়াসংক্রান্ত কয়েকটি পোস্ট দেখা গেছে। ওই সব পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ঢাকার রাস্তায় উবার ব্যবহারের পরিধি বেড়ে যাওয়ার ফলে কি বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য কারসাজি করে হয়তো তারা বেশি ভাড়া আদায় করছে।’

এদিকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করে উবার কর্তৃপক্ষ জানায়, বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে তারা কোনোভাবেই বেশি ভাড়া আদায় করেন না। হয়তো কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এর দায় উবার কর্তৃপক্ষ নিতে রাজি নয়। তবে আর্থিক অসংগতির বিষয়টি তারা খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, পাঁচ মাস ধরে প্রতি মাসে ১০ শতাংশের বেশি হারে চালক ও যাত্রী বেড়েছে উবারের। এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে এই বৃদ্ধির হার ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি। ঢাকার বেশির ভাগ উবার ব্যবহারকারী যাত্রীরা বলেছেন, ভবিষ্যতে এই সেবা যেন ঢাকার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ট্যাক্সির মতো না হয়ে যায়, সেজন্য যাত্রীসেবা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কড়া তদারকি জরুরি।

এদিকে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, উবার ট্যাক্সি-সেবাদাতা না শুধু অ্যাপ হিসেবে নিবন্ধিত হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা ছিল। উবার নিজেকে ‘স্মার্টফোন অ্যাপ’ হিসেবে দাবি করে। এটি ব্যবহার করে ঢাকায় যে গাড়িগুলো ভাড়ায় চলছে, সেগুলোর সবই ব্যক্তিগত হিসেবে নিবন্ধিত। ভাড়ায় গাড়ি চালাতে হলে সরকারকে রাজস্ব দিয়ে রুট পারমিট নিতে হয়। এজন্য গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকায় উবার চালুর ঘোষণা দেওয়ার তিন দিন পর সড়ক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ উবারকে বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) উবারের কার্যক্রমকে বৈধতা দেয়।

যাত্রী নিরাপত্তার কারণে বিশ্বের অনেক দেশেই উবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। কানাডার টরন্টোতে এ কোম্পানি ট্যাক্সি ইউনিয়নের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে। অনেক ইউরোপীয় দেশে বৈধতা পেতে আইনি লড়াই চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ অনেক দেশে আইনের ফাঁক গলিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে উবার।

উবার অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ চালকদের তাৎক্ষণিক অবস্থান জেনে নিয়ে তাকে ডাকতে পারেন। ভাড়া হিসাব করা হয় যাত্রী ওঠার পর থেকে। দূরত্ব, ট্যাক্সি ব্যবহারের সময় আর বেইজ প্রাইস মিলিয়ে অ্যাপ ভাড়া হিসাব করে দেয়। যাত্রা শেষে নগদ টাকা বা ক্রেডিট-ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ভাড়া মেটানো যায়। ঢাকায় প্রতি ট্রিপের ২৫ শতাংশ অর্থ পায় উবার। বাকি ভাড়ার অংশ গাড়ির মালিক ও চালক পায়।

উবারের সেবায় প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীদের গুনতে হয় ২১ টাকা। এর সঙ্গে গাড়িতে কাটানো প্রতি মিনিটের জন্য ভাড়া গুনতে হয় তিন টাকা করে। বেইজ প্রাইস হিসেবে যোগ হয় ৫০ টাকা। আর ট্যাক্সি ডাকার পর যাত্রা বাতিল করলেও ৫০ টাকা দিতে হয়। ঢাকায় উবার তাদের কার্যক্রম চালুর দুই মাস পর ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমান ভাড়া নির্ধারণ করে।

এদিকে সম্প্রতি ঢাকা মহানগরীতে উবারসহ অন্যান্য মোবাইল অ্যাপনির্ভর যাত্রী পরিবহন সেবা একটি আইনি কাঠামোয় নিয়ে আসার কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরীতে উবারসহ অন্যান্য মোবাইল অ্যাপনির্ভর যাত্রী পরিবহন সেবা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করতে জনগণের পাশাপাশি শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিনির্ভর সেবা থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন থাকতে পারি না। তবে একে দেশের প্রচলিত আইনি কাঠামোয় আনতে হবে।’

ধারণা করা হচ্ছে, উবার বিলিংয়ে সারচার্জ বা পিক ফ্যাক্টরের কারণে বেশি চার্জ আসছে। পিক আওয়ারের রেট কত বা কোন এলাকা পিক আওয়ারের আওতায়, এসব তথ্য গ্রাহকদের দেয়নি উবার। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেক যাত্রী। ভাড়া এবং সার্বিক সেবামূল্য উবার কিভাবে নির্ধারণ করে, তা পরিষ্কার করলেই এই ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist