নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জুলাই, ২০১৭

পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

চলতি শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। বেড়েছে একজনও পাস করতে না পারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কুমিল্লা ও যশোর শিক্ষাবোর্ডে ‘ফল বিপর্যয়’ ঘটেছে ইংরেজিতে পাস করতে না পারায়। গত দুই বছর ধরে অর্ধেকে নেমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও কমেছে। গতকাল রোববার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবারের ফল ঘোষণা করেন। পরীক্ষা শেষের ৫৯ দিনের মাথায় এবার ফল প্রকাশিত হলো।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা ফল প্রকাশের পর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। প্রস্তুতি ছাড়া পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যানের নতুন পদ্ধতি এবার থেকে প্রয়োগ হওয়ায় ফল বিপর্যয় ঘটেছে বলে তাদের দাবি। তবে এ দাবিকে অস্বীকার করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েকজন শিক্ষাবিদও এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা মনে করেন, পাসের হার ও জিপিও-৫ কমলেও বর্তমান খাতা মূল্যায়নের পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার মান বাড়বে।

গতকাল সকালে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী এবারের পরীক্ষার ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ফল ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এবার পাস কম হওয়ায় আমরা বিস্মিত হইনি। পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন করার কারণেই এ ফল হয়েছে। গত মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। এসএসসিতে গতবারের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি পাস করেছিল। সে ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে এইচএসসিতে কম খারাপ হয়েছে; এটা সাফল্য।’

ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডে এবার মোট পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এবার পাসের হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ কমেছে। গতবারের তুলনায় জিপিএ-৫ কমেছে ২০ হাজার ৩০৭। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, গত বছর পেয়েছিলেন ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। পাসের হারের পাশাপাশি শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমছে। চলতি বছর এমন প্রতিষ্ঠান মাত্র ৫৩২টি। গত বছর ছিল ৮৪৮টি। এ তুলনায় কমেছে ৩১৬টি। ২০১৫ সালে ছিল এক হাজার ১৩৩টি।

শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ৭২টি, যা গত বছর ছিল ২৫টি, বেড়েছে ৪৭টি। এবার ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন অংশ নিয়ে পাস করেছেন আট লাখ এক হাজার ৭১১জন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা পাসের দিক থেকে এগিয়ে আছেন। সব শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রের তুলনায় ২ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছেন আর অনুত্তীর্ণ ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের চেয়ে ৪৩ হাজার ১১১ জন কম। এবার সাধারণ আটটিসহ কারিগরি ও মাদরাসা মিলিয়ে মোট ১০টি বোর্ডের মধ্যে ভালো ফল করেছে সিলেট বোর্ড।

এ ছাড়া জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে অন্যান্য বছরের মতো এবারও সেরা ঢাকা বোর্ড। মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডে পাস ও জিপিএ-৫-দুটিই কমেছে।

পাস ও জিপিএ-৫ এর হার কমলেও সাফল্য-ছোঁয়া শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস প্রকাশের কমতি ছিল না। ফল ঘোষণার পর নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে নেচে-গেয়ে ও বন্ধুদের মিষ্টি খাইয়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করেন। গতকাল দুপুরে শিক্ষার্থীরা ফল জানতে দুরু দুরু বুকে বিদ্যালয়ে আসেন। দুপর ১টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারেন। ফল ভালো হওয়ায় অনেকেই হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন। ফলের এ খুশির আনন্দ-হিল্লোল দেশের সর্বত্র বয়ে যায়। বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতেও থেমে থাকেনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পাসের হারে এবার এগিয়ে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। গতবারের মতো এবারও ফল বিপর্যয় হয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে। এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছেন ৭২ শতাংশ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭০০ জন। অন্যদিকে, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৭৮ জন। গত বছর পাসের হারে চমক সৃষ্টি করে শীর্ষে থাকা যশোর বোর্ড এবার আটটি বোর্ডের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে। গত বছর ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে আট বোর্ডে শীর্ষে ছিল যশোর বোর্ড। এবার পাসের হার ৭০ দশমিক ২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৪৭ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও সেরা ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ১৮ হাজার ৯৩০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে এবার পাসের হার ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ২৯৪ জন। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮১৫ জন। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯৩০ জন। দিনাজপুর বোর্ডে পাসের হার ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৯৮৭ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ৩৯১ জন। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক হাজার ৮১৫ জন। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৬৬৯ জন।

এবার মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ৯৬ হাজার ৮০২ জন অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৭৪ হাজার ৫৬১ জন। গত বছর ৮৯ হাজার ৬০৩ জন অংশ নিয়ে পাস করেন ৭৯ হাজার ২০ জন। পাসের হার ৭৭ দশমিক ০২ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। এবার হার কমেছে ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ। বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও পাসের হারের সঙ্গে কমেছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। এবার মাদরাসা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট এক হাজার ৮১৫ জন। গত বছর পান দুই হাজার ৪১৪ জন, এবার কমেছে ৫৯৯ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলও গতবারের তুলনায় খারাপ। এবার ৯৭ হাজার ১৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছেন ৭৮ হাজার ৯০৪ জন। এবার এ বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন দুই হাজার ৬৬৯ জন, গত বছর ছিল ছয় হাজার ৫৮৭ জন, কমেছে তিন হাজার ৯১৮ জন।

বিদেশের সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্র থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ২৫৯ জন অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৪৪ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৬ জন। যা পাসের শতকরা হার ৯৪ দশমিক ২১ শতাংশ। শতভাগ উত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠান একটি। চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) ও ডিআইবিএস পরীক্ষা গত ২ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৫ মে লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়। এ বছর ২৬টি বিষয়ে ৫০টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। গত বছর ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে বিষয় বেড়েছে সাতটি ও পত্র বেড়েছে ১৪টি।

ফল পুনঃনিরীক্ষা :

রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আগামী আজ (২৪ জুলাই) থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেওয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য দেড় শ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist