মেহেরপুর প্রতিনিধি
মৃত্যুর অনুমতি চাওয়া সেই যুবকের মৃত্যু
মেহেরপুরে মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রফি (ডিএমডি)’ রোগে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে সবুর হোসেন (২৪) মারা গেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে মেহেরপুর শহরের বেড় পাড়ায় নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। তার ছোট ভাই রায়হান হোসেন (১৩) এবং ভাগিনা সৌরভ হোসেনও (৮) একই রোগে আক্রান্ত। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কাছে এ রোগে আক্রান্ত দুই ছেলে এবং এক নাতির স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলেন সবুরের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতে ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়সম্বল সব শেষ করে নিঃস্ব হন তিনি। চোখের সামনে নিজের সন্তানদের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া দেখে চরম অসহায়ত্ব বোধ করেন তোফাজ্জেল। অসহায়ত্ব বোধ থেকেই তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে এমন আবেদন জানান।
এ খবর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে দুরারোগ্য ব্যাধি ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রফি (ডিএমডি)’ রোগে আক্রান্ত তিন রোগীর চিকিৎসার জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করেন মেহেরপুর সিভিল সার্জন। মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট আশীষ কুমার দেবনাথ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. অলোক কুমার দাস, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আরএমও এবং শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এহসানুল কবীর ওই টিমের সদস্য ছিলেন। সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা সে সময় জানিয়েছিলেন, রোগটি জিনগত। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। এর আগেও জেলা থেকে একটি মেডিক্যাল টিম গঠন করে তার রিপোর্ট স্বাস্থ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ রোগের চিকিৎসা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশের কিছুদিন পর ওই তিনজনের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত নিউরোজেন ব্রেইন এন্ড স্পাইন ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দুরারোগ্য ব্যাধি ‘ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রফি’ আক্রান্ত রোগীদের ভারতে নিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করার আগ্রহ প্রকাশ করায় আশার আলো দেখতে শুরু করেন দরিদ্র তোফাজ্জেল হোসেন। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসেন তারা।
"