চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২২ জুলাই, ২০১৭

সীতাকুন্ডে কাটা পাহাড় ভেঙে পড়ে রফিকের ঘরে

স্ত্রী-ছেলেসহ পাঁচজন নিহত

আবারও পাহাড়ধস। এবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ছলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল ছলিমপুরে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ধসে সেখানে মারা গেছে একই পরিবারের তিন শিশুসহ পাঁচজন। লটকন শাহ মাজার এলাকার তিন নম্বর সমাজের একটি পাহাড়ের মাঝামাঝিতে পেটের অংশে ঘর করে থাকতেন অটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম। রফিকুলের বাড়ি নোয়াখালী। তার ঘরে উঠতে আরেক পাহাড় থেকে অন্তত ৪০ ফুট উঁচুতে উঠতে হয়। আড়াই বছর আগে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করে বসত গড়ে তোলেন তিনি। বৃষ্টির মধ্যে কাটা পাহাড়ই ভেঙে পড়ে রফিকের ঘরে। এতে মারা যান রফিকের স্ত্রী বিবি ফাতেমা (৩০) ও তার ছেলে মো. ইউনুস (১০); রফিকুলের বোন রাবেয়া (২৫) এবং তার দুই মেয়ে সামিয়া (৭) ও লামিয়া (২)। ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পাহাড়ধসের পর রফিকুল, ভাই গিয়াস উদ্দিন ও দুই মেয়ে জান্নাত ও সালমাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

সীতাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ছলিমপুর ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা জঙ্গল ছলিমপুর গ্রামে টিলা ও পাহাড়ে ছিন্নমূল লোকজন ঘর বানিয়ে বসবাস করে। সেখানে বিভিন্ন এলাকাকে সমাজ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। লটকন শাহ মাজার এলাকার ৩ নম্বর সমাজের একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়লে ভেতরে সবাই চাপা পড়েন। এর মধ্যে একজন ঘরের বেড়া ভেঙে বেরিয়ে এসে স্থানীয়দের খবর দিলে তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসার আগেই মাটি সরিয়ে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেন।

সীতাকুন্ডুু উপজেলার অংশ হলেও জঙ্গল ছলিমপুরে যেতে হয় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার শেরশাহ বাংলাবাজার হয়ে। বাংলাবাজার থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জঙ্গল ছলিমপুর স্কুলমাঠে নামতে হয়। অটোরিকশা থেকে নেমে প্রায় দেড় কিলোমিটার কাদামাটির পাহাড়ি পথ হেঁটে গেলে পাহাড়ধসের স্থান। সেখানে খাড়া পাহাড়ের ঢালে টিন দিয়ে ঘর বানিয়েছিলেন অটো রিকশা চালক রফিকুল ইসলাম। সিঁড়ির মতো ৪০টি ধাপ পেরিয়ে সেই ঘরে উঠতে হয়। তিন সন্তান ও স্ত্রী গার্মেন্টসকর্মী ফাতেমাকে নিয়ে সেখানে থাকতেন রফিক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রফিকের বোন রাবেয়া তার দুই মেয়েকে নিয়ে গত রোজায় ভাইয়ের বাড়িতে আসার পর আর ফিরে যাননি। পাহাড়ধসে রফিকের স্ত্রী ও এক ছেলের সঙ্গে তাদেরও মৃত্যু হয়।

জঙ্গল ছলিমপুর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী মশিউর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনা হয়। তাদের সমতলে কয়েকটি ঘরবাড়িতে নেওয়া হয়। কিন্তু রাত ১০টার দিকে অনেক পরিবারের সদস্য না জানিয়ে চলে যায়।

সীতাকু-ু থানার ওসি ইফতেখার হাসান বলেন, পাহাড়ধসের সময় রফিক ও তার বোনের স্বামী কালাম বাড়ি থেকে বের হতে পারেন। কিন্তু তাদের পরিবারের সদস্যরা চাপা পড়েন। ছিন্নমূল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ও স্থানীয় লোকজন তাদের লাশ উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ট্রেনিং) লে. কর্নেল মোশাররফ হোসেন বলেন, যে পাহাড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এর মধ্যে খাড়া ঢালে টিনের ঘর বানানো হয়েছিল। পাহাড়ধসে ঢাল দিয়ে নামা মাটি সরাসরি ঘরের ওপর পড়েছে।

সীতাকুন্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন বলেন, পাহাড়ধসে নিহত প্রতিজনকে ২০ হাজার টাকা ও ১০ কেজি চাল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সে হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারকে এক লাখ টাকা এবং ৫০ কেজি চাল সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist