সিলেট ও পাবনা প্রতিনিধি

  ১৮ জুলাই, ২০১৭

ছাত্রলীগের আধিপত্যের লড়াই

*সিলেটে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে কর্মীকে গুলি করে হত্যা *পাবনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ভাঙচুর

সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। গতকাল সোমবার দুপুরে ছাত্রলীগের ‘পল্লব গ্রুপ’ ও ‘পাভেল গ্রুপ’ এর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত ছাত্রলীগ কর্মীর নাম খালেদ আহমদ লিটু (২৫)। তার মরদেহ ইংরেজি বিভাগের একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষসহ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়াসহ এসব ঘটনা ঘটে।

গতকাল দুপুরে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে নিহত লিটন আহমদ লিটু পাভেল গ্রুপের কর্মী এবং পৌর শহরের নয়াগ্রাম রোডে একটি মোবাইল ফোনের দোকানের মালিক। তিনি পৌরসভার প-িতপাড়া এলাকার ফয়জুর রহমানের ছেলে। বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ শুরু করছে। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সিলেটে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলেজের ওই কক্ষ থেকে গুলির শব্দ শুনে ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে যুবকের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। যুবকের ডান চোখের ওপর গুলির চিহ্ন রয়েছে। এ সময় কক্ষে অন্য কাউকে পায়নি পুলিশ। তারা আরো জানান, সকালে কলেজের প্রথমবর্ষের দুই ছাত্রের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা পৌনে দুইটার দিকে যোগাযোগ করলে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কলেজে দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। পুলিশ লিটুর মরদেহ উদ্ধার করে বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাসুম আহমদ জানান, মাথায় গুলি লাগায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিয়ানীবাজারে প্রায় ১২ বছর ধরে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। তবে কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের অন্তত ১২টি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তার করতে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষে সক্রিয়তা দেখা যায়। সম্প্রতি কমিটি গঠনের তোড়জোড় চলায় প্রভাবশালী দুটি পক্ষ কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে এ ঘটনা ঘটে। তবে লিটু ওই কলেজের ছাত্র নন বলে কলেজ সূত্র নিশ্চিত করেছে। যোগাযোগ করলে কমিটি না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম। তবে, ঘটনাটি কারা ও কেন ঘটিয়েছে, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। নিহত ওই যুবক কলেজের শিক্ষার্থী নয় বলে জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ বলেন, কী নিয়ে ঘটনা ঘটেছে বুঝতে পারিনি। সকাল ১১টার দিকে বিজ্ঞান বিভাগ ও ইংরেজি বিভাগের কক্ষগুলো পরিদর্শন করি। সে সময় ওই কক্ষ খালি ছিল। এরপর হঠাৎ করে গুলির শব্দ পাই। ক্যাম্পাসে থাকা পুলিশ সদস্যরা শব্দ শোনে ঘটনাস্থলে গিয়ে যুবকের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় স্নাতক প্রথমবর্ষের গতকালের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কলেজ ছুটি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের বিষয়ে সদর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদ সিদ্দিকী শান্ত ও সহসভাপতি আরাফাত পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে গতকাল ভোরে আরাফাত পক্ষের লোকজন শান্তর পক্ষের একজনকে মারধর করে। সকাল ১০টার দিকে উভয় পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর দুই পক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দিগি¦দিক ছোটাছুটি করে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে জানিয়ে ওসি রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরাফাত হোসেন অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান সভাপতি শাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক ওলীউল্লাহ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে বিভিন্ন অপকর্ম করে। তার প্রতিবাদ করলেই তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। তারা আমার রুমে ব্যাপক ভাঙচুরসহ লুটপাট করেছে।’ সভাপতি শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রিসহ সেবন করেন বলেও অভিযোগ করেন আরাফাত। তিনি বলেন, ‘মাদকদ্রব্যর বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।...সাধারণ সম্পাদক ওলীউল্লাহর ছাত্রত্ব নেই, তবু তিনি পদ ধরে রেখেছেন। তারা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন।’ তবে সভাপতি শান্ত মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সকাল থেকে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।...আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হলে দোষী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist