সাভার প্রতিনিধি

  ১৭ জুলাই, ২০১৭

সারোয়ার-তামিম গ্রুপের চার জঙ্গির আত্মসমর্পণ

আশুলিয়ার আস্তানায় দফায় দফায় গুলি, বিস্ফোরক উদ্ধার

ঢাকার আশুলিয়ায় একটি বাড়িকে জঙ্গি আস্থানা সন্দেহে র‌্যাব সদস্যরা ১১ ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর ‘চার জঙ্গি’ আত্মসমর্পণ করেছেন। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, ওই চারজন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সদস্য। ওই বাড়িতে অবস্থান নিয়ে তারা ‘বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা’ করছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির মালিক ইব্রাহীমকেও আটক করা হয়েছে। এই অভিযানের সময় আশপাশের বাড়ি থেকে লোকদের অনত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত শনিবার রাত ১টায় র‌্যাব-৪-এর একটি দল নয়ারহাটে চৌরাবালি এলাকায় ইব্রাহীম নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এরপর গতকাল রোববার দুপুর

পর্যন্ত দফায় দফায় গোলাগুলি চলে এবং বাড়ির ভেতর থেকে বোমাও ছোড়া হয়। তখন হ্যান্ডমাইকে বারবার ‘জঙ্গিদের’ আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই দিন দুপুর ১২টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে চারজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন ও র‌্যাবের কাছে ধরা দেন। পরে ঘটনাস্থলের কাছে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ির ভেতরে কয়েকটি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাওয়া গেছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক চার জঙ্গির নাম মোজাম্মেল হক, রাশেদুল নবী, এরফানুল হক ও আলমগীর। তাদের মধ্যে মোজাম্মেলকে দলনেতা বলছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। আজাদ নামের এক লোক পোশাককর্মী পরিচয় দিয়ে গত মাসে আড়াই হাজার টাকায় টিনশেডের ওই বাসাভাড়া নেন বলে বাড়ির মালিক ইব্রাহীম র‌্যাবকে জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেছেন, ওই বাসায় কয়েক দিন আগে আসবাবপত্র নিতে দেখে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। তারা তাকে বলেছিলেন, সেখানে একটি এনজিওর অফিস খোলা হবে। সে জন্যই আসবাসপত্র নেওয়া হচ্ছে।

মুফতি মাহমুদ খান জানান, এপ্রিলের শেষ দিকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কয়েকজনকে আটক করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পারেন, এই জঙ্গি দলের কয়েকটি গ্রুপ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয়। এর সূত্র ধরে বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাবের গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়ানো হলে আশুলিয়ায় এই বাড়ির সন্ধান মেলে। র‌্যাব-৪-এর একটি দল শনিবার রাত ১টায় বাড়িটি ঘিরে ফেলে।

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি লুৎফুল কবীর বলেন, রাত ৩টার দিকে বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিরা’ র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে কমপক্ষে পাঁচ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এরপর গতকাল রোববার সকাল ৬টায় আবার গুলি করে তারা। কয়েকটি বোমাও ছোড়া হয়। জবাবে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। লুৎফুল কবীর জানান, বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিদের’ আত্মসম্পর্ণ করার জন্য হ্যান্ডমাইকে বেশ কয়েকবার আহ্বান জানানো হলেও তখন তারা সাড়া দেননি। বরং র‌্যাব সদস্যদের ‘তাগুতির দল’ আখ্যায়িত করে তারা গালাগাল করেন।

আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দলও সকালে ঘটনাস্থলে যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে আশপাশের বাড়িগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়। সকাল ৯টার পর র‌্যাবের একটি এপিসি ওই বাড়ির কাছাকাছি যেতে দেখা যায়। আকাশে একটি হেলিকপ্টারও চক্কর দিতে দেখা যায়। বাড়ির ভেতরে থাকা ‘জঙ্গিদের’ উদ্দেশে হ্যান্ডমাইকে বলা হয়, দুপুর ১২টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে র‌্যাব চূড়ান্ত অভিযানে যাবে।

বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বাড়ির দিক থেকে একটানা বেশ কিছুক্ষণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ আসে। এরপর ১২টায় একজন বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেন। মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আত্মসমর্পণের পর তিনি জানান, ভেতরে আরো তিনজন রয়েছেন। কোনো নারী বা শিশু তাদের মধ্যে নেই। এরপর এক ঘণ্টার মধ্যে একে একে বাকি তিনজনও বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের জীবিত ধরা, এ কারণে আমরা সময় নিয়েছি।’ র‌্যাব-৪-এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর আবদুল হাকিম জানান, চারজন ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পর র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা সেখানে প্রবেশ করেন। অভিযান পুরোপুরি শেষ হলে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist