শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ১৭ জুন, ২০১৭

আবারও ধস আতঙ্কে পাহাড়ের বাসিন্দারা

বিচ্ছিন্ন রাঙামাটিতে জ্বালানি সংকট, দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের

পাহাড়ি ধস-ঢলে এখনো বিপর্যস্ত পার্বত্যাঞ্চল। পাহাড়ের বহু জায়গায় ভেঙে পড়েছে রাস্তা। বিচ্ছিন্ন রাঙামাটিতে সৃষ্টি হয়েছে জ্বালানি সংকট। দাম বেড়েছে নিত্যপণ্যের-খাবারের। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টি। গতকাল শুক্রবারও থেমে থেমে হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে চট্টগ্রাম বিভাগে ফের পাহাড়ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন পাহাড়ের বাসিন্দারাও।

মঙ্গলবার ভোর থেকে পাহাড়ধসের কারণে রাঙামাটি জেলার সঙ্গে দেশের অন্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের ঘাগড়া কলাবাগান থেকে মানিকছড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটেই পার হতে হচ্ছে। ঘাগড়া থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত সড়কজুড়ে ৩৫টি ছোট-বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলের কারণে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের সাপছড়ি শালবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে কমপক্ষে ১৫০ ফুট গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঘাগড়া বাজার এলাকায় পাহাড়ধসে সড়কের ওপর মাটি নেমে আসায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সড়ক। তিন দিন পর শুক্রবার সকালে সেই মাটি সরিয়েছে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল।

সড়কপথ বিচ্ছিন্ন থাকায় কর্ণফুলী নদী হয়ে রাঙামাটি-কাপ্তাই রুটে বোট ও লঞ্চ চলাচল করছে। চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে কাপ্তাই যাওয়ার পর সেখান থেকে লঞ্চে করে যেতে হচ্ছে রাঙামাটি। আবার একইভাবে রাঙামাটি থেকে বোট ও লঞ্চে কাপ্তাই এবং সেখান থেকে বাসে আসা যাচ্ছে চট্টগ্রাম। সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু মুছা বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যোগাযোগ সচল করতে সময় লাগবে। কত দিন লাগবে, সেটা বলা কঠিন। সাপছড়ি শালবাগান অংশে বিকল্প ব্যবস্থায় লোকজন যাতে নিরাপদে অন্তত হেঁটে যেতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এদিকে অতিবৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত রাঙামাটিতে জনজীবনে স্বস্তি ফেরার আগেই আবার আতঙ্কিত লোকজন। গত বৃহস্পতিবার রোদের দেখা মিললেও দুপুরে ঝুম বৃষ্টি হয়। এরপর ক্ষান্ত দিয়ে রাত থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এতে লোকজন ফের পাহাড়ধসের আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। রেড ক্রিসেন্টের রাঙামাটি জেলা যুব উপপ্রধান মো. সাইফুল উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার রাতেই মাইকিং করে সতর্ক করা হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার তৎপরতা শুরু হয়। ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অনেকে নিজ উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন। এসব কেন্দ্রে দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। রাঙামাটি সরকারি কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া নুর বানু বলেন, বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আশপাশের পাহাড়ধসে পড়বে মনে হচ্ছে। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি।

এদিকে, রাঙামাটি শহরের চারটি পেট্রলপাম্পেই বৃহস্পতিবার থেকে তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পাম্প মালিকদের দাবি-তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। অবশ্য শহরের কিছু কিছু জায়গায় খোলা বাজারে মিলছে জ্বালানি তেল। তবে সেখানে দাম বেশ ছড়া। গতকাল প্রতি লিটার পেট্রল ও অকটেন বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। অথচ শহরের পাম্পে গত বুধবার অকটেন ও পেট্রল বিক্রি হয়েছে প্রতি লিটার ৮৯ টাকায়।

জ্বালানি সংকটের কারণে যানবাহন চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে। শহরে গুটিকয়েক সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন নেই। এদিকে রাঙামাটিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এলপি গ্যাস, কাঁচাবাজারে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সবজিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। বনরূপা বাজারে চার দিন আগে ১৮ টাকায় বিক্রি হওয়া আলু গতকাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকায়। ৬০ টাকার মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এলপি গ্যাসের বোতলপ্রতি দামও চার দিনে ৮৬০ টাকা থেকে বেড়ে এক হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।

তবে আশার কথা পাহাড়ধসে বিপর্যস্ত রাঙামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। গত সোমবার রাত থেকে অন্ধকারে ডুবে থাকা রাঙামাটিতে বেশির ভাগ জায়গায় শুক্রবার বিদ্যুৎ এসেছে। বিদ্যুৎ আসার ফলে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও। পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দুলাল হোসেন বলেন, পাহাড়ধসে অকল্পনীয় ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শহরের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা সম্ভব হয়। শুক্রবার বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist