সংসদ প্রতিবেদক

  ১৬ জুন, ২০১৭

‘আবগারি শুল্ক মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

বাজেটে প্রস্তাবিত ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক ও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া বলেন, ‘ব্যাংক আমানতে বাড়তি আবগারি শুল্ক থেকে সরকার কত পাবে? আয় আসবে ২০০ কোটি টাকার মতো। এর জন্য বিপুল লোকের আয় কমিয়ে দেব?’ মতিয়া চৌধুরী সংসদকে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সেই দাদুর কথা মনে পড়ছে। যে নিজের নাতিকে খুন করে যক্ষ বানিয়ে ধন পাহারা দিয়েছিল। অর্থমন্ত্রী কি আমাদের যক্ষের ধন পাহারাদার বানাচ্ছেন? ব্যাংকের সুদ নিম্ন পর্যায়ে, ব্যাংক সার্ভিস চার্জ কাটে। এর মধ্যে এই আবগাড়ি শুল্ক হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এটাতো মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের টাকা না, যে ঘি দিয়ে প্রদীপ জ্বালাব।’ তিনি বলেন, ‘পুরো প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিলে ক্ষতি হবে ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা অর্থমন্ত্রীর জন্য, আমাদের বাজেটের জন্য পি-নাট। সেখানে কেন উনি (অর্থমন্ত্রী) হাত দিচ্ছেন?’

অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন তার বাজেট প্রস্তাবে ব্যাংক হিসাবের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বছরের যেকোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে। পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ টাকার বদলে দুই হাজার ৫০০ টাকা, এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যও জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এরপর অর্থ প্রতিমন্ত্রী মান্নান মঙ্গলবার সংসদে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে ‘চিন্তাভাবনা’ চলার কথা জানান। বুধবার অর্থমন্ত্রী এই শুল্কের হারে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

গতকাল বাজেট আলোচনায় সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিরোধিতা করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের ওপর সুদ কমানো ঠিক হবে না। ১০ শতাংশ সুদ ধরলে হয়তো হবে এক হাজার কোটি টাকা। এর সুবিধা পাবে লাখ লাখ লোক। যাদের জন্য কোনো সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প নাই। তারা ট্রাকের সামনে দাঁড়াতে পারেন না, হাত পাততে পারেন না। ?এদের অনেকে সিনিয়র সিটিজেন। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।’ মতিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক শ্রেণির মানুষকে ভর্তুকি দিই, যার প্রাপ্য নয়। তার চেয়ে বড় কথা, ঋণ খেলাপিদের বিশাল ?বোঝা নিতে পারলে আমরা কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা নেব না। প্রবলেম একটাই, এদের প্রেসার গ্রুপ নাই, থাকলে লেজ গুটায়ে মেনে নেওয়া হতো।’ কৃষিমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের কাছ থেকে বা বিদেশি ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের ঋণ ভালো ও সহজ। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মোটা চালের দাম বাড়লে কৃষক দাম পাবে। আমরা কৃষককে বাধ্য করতে পারি না। আবার চালের দাম রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে ব্যালেন্স করে আগাতে হচ্ছে।’ আইএমএফ, বিএনপি ও মোহাম্মদ ইউনূসেরও সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী।

আলোচনায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতির সমালোচনা করে জাসদের নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘সকালে বিদ্যুৎ? আসলে বিকালে নাই, বিকালে আসলে ইফতারের সময় নাই, ইফতারে আসলে সাহরিতে নাই। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ? প্রতিমন্ত্রীর কোনো বক্তব্য নাই। জনগণ নানা কথা বলছে।’ বিড়ি ও সিগারেটে একই রকম করারোপের প্রস্তাব না করার সমালোচনা করে নাজমুল হক বলেন, ‘এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। তারা একটি পয়সাও দেশে বিনিয়োগ করে না। অন্যদিকে দেশীয় বিড়ি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করে। সব তামাক পণ্যের ওপর একই শুল্ক আরোপ করা হোক।’ তিনি বলেন, ‘আগে গ্রামে হুক্কা-নাশা ছিল। উন্নয়নের কারণে সেগুলো বিদায় নিয়েছে। বিড়ি বিদায় করবেন, উনি বলেননি তামাক বিদায় করবেন। সিগারেটকে কেন উৎসাহিত করছেন? সিগারেট গরিব লোক খায় না বলে?’

‘নির্বাহী ও বিচার বিভাগের শীতল সম্পর্কের অবসান প্রয়োজন’

নির্বাহী ও বিচার বিভাগের চলমান ‘শীতল সম্পর্কের’ অবসান ঘটাতে বলেছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্য অঙ্গ সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। গতকাল সংসদে বাজেট আলোচনায় পঞ্চগড়-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অধিবেশনের সভাপতিত্বকালে এ কথা বলেন তিনি। সুজন বলেন, ‘সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে একটা শীতল অবস্থা বিরাজ করছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এক সময় থাকব না। কিন্তু বিচার বিভাগ কাজ করে যাবে। আমরা যেন আগামীর জন্য মজবুত গণতন্ত্র দিতে পারি; সংবিধানের ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। আমাদের যে গণতান্ত্রিক ধারা রয়েছে, তা আরো মজবুত করতে বিচারবিভাগের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।’ গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংসদ সদস্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার কথাও বলেন সুজন। তার বক্তব্যের পর ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘তবে শীতল অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটানো প্রয়োজন। আশা করি, এতে আপনারাই নেতৃত্ব দেবেন।’ নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে কয়েক মাস আগে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে। প্রধান বিচারপতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিচার বিভাগ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে পাশ কাটানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমঝোতার মাধ্যমেই চলতে হবে। পরস্পরকে দোষারোপ করে একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। এর মধ্যেই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একদিন বলেন, কোনো দেশে প্রধান বিচারপতিরা ‘প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না’। এরপর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়’ বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বলেই তাকে কথা বলতে হচ্ছে।’ এর মধ্যে সংসদেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের সম্পর্ক নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিও ওঠে। এ ছাড়া সংসদে গৃহীত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্ট বাতিল করলেও তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্যরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist