প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ মে, ২০১৭

সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎস বন্ধে শেখ হাসিনার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থায়নের জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি আরবের রাজধানীতে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই।’ শেখ হাসিনা একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি সকলের জন্যই একটা বিজয়ী পরিস্থিতির তৈরি করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিশ্বের শান্তির জন্য কেবল বড় হুমকিই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও। এটি যেকোনো দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলাদেশ সকল প্রকার চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বদাই যেকোনো ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উৎসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই, তারা যেকোনো ধর্ম থেকে আসুক না কেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ শরণার্থী সংকট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি উৎসে পরিণত হতে পারে। শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি। কারণ আমিও শরণার্থী ছিলাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবারের বন্দিত্ব এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের শাহাদাত বরণের পর ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছয় বছর আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে শরণার্থী ছিলাম।’

লিখিত বক্তব্যে শেখ হাসিনা জানান, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সকল শ্রেণি বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র এবং দেশব্যাপী মসজিদগুলোর ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। এবং রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সন্তুষ্ট।

উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে ইসলামি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লড়াইকে ‘সভ্যতার সংঘাতের’ বদলে ‘শুভ ও অশুভের যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল-আজিজ আল সৌদ। পরে বাদশাহর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন হাসিনা। রোববার স্থানীয় সময় বিকেলে শুরু হয় শীর্ষ বৈঠক।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করা; মূলমন্ত্র ছিল ‘টুগেদার উই প্রিভেইল’।’ তিনি বলেন, ‘সবাই যদি আমরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, তাহলে এটা রোধ করা সম্ভব।’ সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর জোট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘এই জোটের একটা মিলিটারি সাইড আছে, একটা পলিটিক্যাল সাইড আছে। আমরা প্রাইমারিলি পলিটিক্যাল সাইডে শতভাগ অংশ নিচ্ছি।’ সামরিক দিকে কোন পরিস্থিতিতে আমরা সৈন্য পাঠাব তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ব্যাখ্যা করেছেন। ‘সেটা হলো, দুই পবিত্র স্থান (মক্কা ও মদিনা) আক্রান্ত হলে তা রক্ষার জন্য আমরা সৈন্য পাঠাব।’ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ করাসহ চার দফা প্রস্তাব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাসী বোঝাতে গিয়ে ইসলাম শব্দটি ব্যবহার করা যে উচিত নয়- সেই ঘোষণা দিতে সম্মেলনে উপস্থিত আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মদিনায় : মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে মদিনায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ যোগদান শেষে শেখ হাসিনা গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২৫ এ সৌদি রয়্যাল ফ্লিটের একটি উড়োজাহাজে করে মদিনার প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আবদুল আজিজ বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান সৌদি আরবের ডেপুটি প্রিন্স সৌদ বিন খালেদ আল ফয়সাল। প্রধানমন্ত্রী মসজিদে নববীতে জোহরের নামাজ শেষে মহানবীর (স.) কবর জিয়ারত করার কথা। সন্ধ্যায় আকাশ পথে জেদ্দা গিয়ে পরে সড়কপথে মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালন করার কথাও রয়েছে তার। সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ যোগ দিতে শনিবার রাতে রিয়াদে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সফর শেষে আজ মঙ্গলবার রাতে দেশে ফেরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist