দীপক শর্মা দীপু, কক্সবাজার

  ১৯ মে, ২০১৭

খুদে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার

এবার বিক্রি হবে ইটভাটার ধোঁয়া

ঢাকার চারপাশে স্থাপিত ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হয়ে পড়ছে রাজধানীর বাতাস। এর ওপর তো কলকারখানা ও গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া তো আছেই। এ থেকে পরিত্রাণের আর কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছে না মানুষ। শুধু রাজধানীই নয়, সারা দেশেই এই দূষণ একটি অভিশাপ হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। ঠিক সেই সময়, এই অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করার সুসংবাদ দিচ্ছেন কক্সবাজারের কয়েকজন খুদে বিজ্ঞানী। এই ইটভাটার চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় বাতাস যেখানে বিষাক্ত হয়, সেখানে ওই বিষাক্ত ধোঁয়া বিক্রি করে রীতিমতো লাভের কথা বলছে খুদে বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার।

এই আবিষ্কার থেকে জানা গেছে, এসব ধোঁয়া প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মূল্যবান অ্যাসিড তৈরি হতে পারে, যা বিক্রি করে লাভবান হতে পারে ভাটা মালিকরা। এমনটিই জানান কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, ইটভাটা থেকে নির্গত বিন্দুমাত্র ধোঁয়াও বাতাসে ছড়াবে না।

হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, ‘চারিদিকে দালান উঠছে, নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, গড়ে উঠছে ইটের শহর। এসব উন্নয়ন হচ্ছে ইটের ওপর নির্ভর করে। আর ইট তৈরি করতে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে পরিবেশের ক্ষতি। উন্নয়ন করতে গেলে পরিবেশের ক্ষতি হবে আর পরিবেশ রক্ষা করতে গেলে উন্নয়ন হবে না। এই মহাসমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এগিয়ে এলেন তিন শিক্ষার্থী।’ তিনি জানান, বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণির ছাত্র নুরুল আলম, নবম শ্রেণির ছাত্রী সৃষ্টি শর্মা ও কান্তা শর্মা দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া কিভাবে বিশুদ্ধ করা যায় এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে আসছিল। এক পর্যায়ে তারা আবিষ্কার করে ‘ইটভাটা পরিবেশ দূষণরোধ ও অ্যাসিড সংরক্ষণ’ প্রকল্প।

আর এই প্রকল্প নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাজির হয় কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরিতে। সেখানে শুরু হয়েছে ২৮ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ প্রকল্প প্রদর্শন মেলা। মেলায় উদ্বোধনী দিনে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই প্রকল্প। প্রকল্প সম্পর্কে জানতে ভিড় করেন কৌতূহলী দর্শনার্থীরা।

এ সময় প্রকল্প উপস্থাপনকারী ছাত্র নুরুল আলম বলেন, ‘ইটভাটা থেকে চার প্রকারের বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। এই চার প্রকারের এই গ্যাস হচ্ছে- সালফার ডাই অক্সাইড, সালফার ট্রাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড ও কার্বন ডাই অক্সাইড। এসব গ্যাস বাতাসে মিশতে না দিলে পরিবেশ সুরক্ষা হবে। এ জন্য এসব গ্যাস বাতাসে যাতে ছড়াতে না পারে সেই জন্য বিশেষ পাইপ দিয়ে গ্যাসসমূহ ‘ধোঁয়া পৃথকীকরণ প্রকোষ্টে’ আনতে হবে। এই প্রকোষ্ট থেকে চার প্রকারের ধোঁয়া আলাদা হয়ে পানির পাত্রে চলে যাবে। আর পানির সঙ্গে মিশে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ইটভাটা থেকে নির্গত এসব দূষিত ধোঁয়া চার প্রকারের মূল্যবান অ্যাসিডে পরিণত হবে। মূল্যবান এসব অ্যাসিড হচ্ছে- সালফিউরাস অ্যাসিড, সালফিউরিক অ্যাসিড, কার্বানার্স অ্যাসিড ও কার্বনিক অ্যাসিড । এসব অ্যাসিডের চাহিদা ও বাজার মূল্য অনেক বেশি।’

প্রজেক্ট উপস্থাপনকারী অপর দুই ছাত্রী কান্তা শর্মা ও সৃষ্টি শর্মা জানান, ‘ এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ইটভাটা থেকে প্রাপ্ত বিষাক্ত ধোঁয়া প্রক্রিয়াজাত করে পরিবেশ সংরক্ষণ আর উৎপন্ন হওয়া মূল্যবান অ্যাসিডসমূহ বাজারজাত করার ধারণা দেওয়া হয়েছে। এই প্রজেক্ট ইটভাটায় বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। লাভবান হবে মালিকরা আর সুস্থ থাকবে মানবসমাজ। ’

‘ইটভাটা পরিবেশ দূষণ রোধ ও অ্যাসিড সংরক্ষণ’ প্রজেক্ট পরীক্ষামূলকভাবে ইটভাটায় বাস্তবায়ন হলে এবারের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের সার্থকতা হবে বলে মনে করেন দর্শনার্থীরা। এ জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist