প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মে, ২০১৭

সেলফিতে সর্বনাশ!

রাজধানীর বনানীতে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার অন্যতম আসামি নাঈম আশরাফ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে এখন রিমান্ডে। বহুল আলোচিত এই নাঈম রিমান্ডে থাকলেও তার অতীতের অনেক ছবি ও সেলফি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় আলোড়ন তৈরি করেছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে নাঈম মিডিয়ার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মিডিয়া সেলিব্রিটির সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। সেসব ছবি ও সেলফি ওইসব তারকা-সেলিব্রিটিদের জন্য সর্বনাশের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

বনানীতে ধর্ষণ কান্ডের পর থেকে নাঈম আশরাফের সঙ্গে কয়েকজন সেলিব্রিটির সেলফি দেখে ওইসব তারকা-সেলিব্রিটিদের নানাভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত করা হচ্ছে নানা অমূলক ও অপব্যাখ্যায়। ফেসবুকে এভাবে কারো সম্পর্কে না জেনে বা বিষয়ের প্রেক্ষাপট না বুঝেই মন্তব্য করাকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারাহ দীবা। ড. ফারাহ দীবা একটি টিভি অনলাইনকে বলেন, সামাজিক মাধ্যম হলো এমন একটি মাধ্যম, যেখানে অনেকটা যা খুশি বলা যায়। এটি কোনো সমস্যা নয়। মানুষ কোনো কিছু দেখার পর নিজের জ্ঞান ও ধারণা থেকে কথা বলবে, এটিই স্বাভাবিক। তবে ভালো বিষয় থেকে মানুষ খারাপ বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে আনন্দ পায়। তাই সাইকোলজি ভাষায় এটিকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি বলে।

মনোবিজ্ঞানীরা এ মন্তব্য বা সমালোচনা করাকে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি বললেও নাঈম আশরাফের সঙ্গে সেলফি তোলা কয়েকজন বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। কেউ কেউ তাদের মানহানি হয়েছে বলে মনে করে মামলা করারও চিন্তা করছেন।

কোনো এক অনুষ্ঠানের সূত্রে নাঈম আশরাফের সঙ্গে সেলফি তোলা সংগীত শিল্পী লোপা হোসেইন বলেন, ‘আসামি নাঈম আশরাফের সঙ্গে আমার যে সেলফি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা হচ্ছে, সেটি আমার তোলা সেলফি না, এটি অন্য আরেকজনের মোবাইল ফোনে তোলা। আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হয় এবং সেসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পরিচিত ও অপরিচিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে হয় এবং অনুরোধে ছবিও তুলতে হয়।’

অনেক ক্ষোভ নিয়ে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা লোপা হোসেইন আরো বলেন, ‘সম্প্রতি একটি অনলাইন পোর্টালে আসামি নাঈমের বেপরোয়া জীবন একটি নিউজ করেছে, সেখানে ছবি হিসেবে আমার ছবি ব্যবহার করেছে, মানুষ তো এখন ধারণা করে নিচ্ছে যে, নিউজে যাদের ছবি আছে, তাদের সবার সঙ্গে নাঈমের সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমার কথা যারা এ নিউজটি করেছে তারা এই সোর্স কোথায় পেয়েছে? কিসের ভিত্তিতে এমন নোংরা নিউজে আমার ছবি জুড়ে দিল। এ কারণে সামাজিকভাবে আমার চরমভাবে মানিহানি হয়েছে।’ লোপা আরো বলেন, ‘কেউ চাইলে আমার অর্জিত সম্মানটা এভাবে ক্ষুণœ করতে পারে না। আমার এক ধরনের মানহানি ঘটানো হয়েছে। তাই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে ওই পোর্টালের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব।’

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফারহানা নিশো ও নাঈম আশরাফের সেলফি নিয়েও সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফারহানা নিশোও বিষয়টি সংগত কারণে সহজভাবে নিতে পারেননি। নিশো তার ফেসবুকে লিখেছেন : ‘আমার বিরুদ্ধে যে বা যারা বিভিন্ন ছবি সংযুক্ত করে মিথ্যা/ভিত্তিহীন অপবাদ দিয়ে লিখছেন বা আমাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন কিংবা ওসব লেখা শেয়ার করছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেসব লেখা ডিলিট করুন অন্যথায় আমি ৫৭ ধারায় আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।’

সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করার বিষয়কে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি বলা মনোবিজ্ঞানী ড. ফারাহ দীবা সেলফিকান্ডের বিষয়ে বলেন, ‘অনলাইন বা সামাজিক মাধ্যমে আমরা এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত নই। তাই কেউ কোনো পোস্ট করলে নিজেদের জ্ঞান নিয়ে কমেন্ট করে বসি। তারা এটাও জানে না তার কোনো মানহানি ঘটবে কি না। শুধু তাই নয়, খারাপ কমেন্ট করে বসে। এরা মূলত মানুষদের নিয়ে খারাপ কথা বলতে বেশি আনন্দ ও তৃপ্তি পায় এবং শ্রেণিটি অশিক্ষিত। কারো সঙ্গে সেলফি তুললেই সেলফি তোলা চরিত্রদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে, এটা মনে করা অনেক সময় ‘মানসিক রোগ’ পর্যায়ে পড়ে।’ সামাজিক মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও আচরণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও এর অনেক ইতিবাচক প্রভাব আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘এর আগেও বড় ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা ফেসবুকে আলোড়ন তোলার পর সবার সামনে এসেছে। তাই আমি মনে করি, নেতিবাচক দিকটি নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিবাচক দিকে নিয়ে কথা বলা উচিত।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist