এম এ রউফ ও মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ২৯ মার্চ, ২০১৭

‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ সমাপ্ত ঘোষণা

জঙ্গিবাদ দমনে মাইলফলক : সেনা ব্রিফিং

সিলেটের জঙ্গি আস্তানা ’আতিয়া মহলে’ কমান্ডো অভিযান অপারেশন টোয়াইলাইট এর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত আটটায় সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন সেনা গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপারেশন টোয়াইলাইট জঙ্গিবাদ দমনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।’

ফখরুল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই সেনাবাহিনী এই অভিযানে অংশ নেয়। এ সময় দুই জঙ্গির লাশসহ আতিয়া মহল পুলিশের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আতিয়া মহলের ৩০ ফ্ল্যাটের ১৫০ টি কক্ষ রয়েছে, তাই আটকেপড়া বাসিন্দাদের উদ্ধারে একটু সময় লেগেছে। সেখানে প্রায় ১০ আইডি ডিসপোজাল করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ভবনের প্রত্যেকটি প্রবেশদ্বার এবং নিচের ফ্লোরে শক্তিশালী বিস্ফোরকদ্রব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা ছিল, তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে অপারেশন চালাতে হয়েছে। সেনাবাহিনী সোমবারই জঙ্গিদের দমন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় উল্লেখ করে ফখরুল আহসান বলেন, সোমবারের মধ্যেই জঙ্গিদের নিষ্ক্রিয় করতে সমর্থ হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ এ অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। তবে আতিয়া মহল জুড়ে জঙ্গিরা বিস্ফোরক পেতে রাখায় পুরো ভবনটিই ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা সোমবার অভিযানের পর থেকে গতকাল ভবনটিতে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক ও বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে। ভবনটিকে ঝুঁকিমুক্ত করে মঙ্গলবার বিকেলে তা পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভবনে এখনো বেশ কিছু বিস্ফোরকদ্রব্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন পুলিশ ও র‌্যাব এবং বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সেগুলো নিষ্ক্রিয়করণে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকন উদ্দিন জানান, বিকেল সোয়া ৫টায় তারা ওই ভবনের দায়িত্ব বুঝে পেয়েছেন। দুই জঙ্গির লাশ এখনো ভেতরে রয়েছে। তাদের গায়ে সুইসাইড ভেস্ট থাকায় সরানো হয়নি। পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে, নিহত চার জঙ্গির মধ্যে একজন জেএমবির শীর্ষ নেতা মাঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কাউন্টার টেররিজম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র। সূত্র আরো জানায়, নিহত চার জঙ্গির একজনের চেহারার সঙ্গে মুসার চেহারার মিল রয়েছে। এ ছাড়া তার প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে লড়ার দক্ষতা, প্রতিরোধের কৌশল, লড়াকু মনোভাব, অভিযানের সময় ছটফটে আচরণ দেখে ধারণা করা হয়েছে ওই ব্যক্তি ম?ুসা। তবে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাবে না বলেও তিনি জানান।

এর আগে গত সোমবার টানা চার দিনের অভিযান শেষে পাওয়া চার লাশের মধ্যে এক নারী ও এক পুরুষের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক শামসুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল লাশ দুটির ময়নাতদন্ত করে। এদের মধ্যে পুরুষ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে। আর নারী নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশের ধারণা। সোমবার সেনাবাহিনী ওই দুইজনের লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর মঙ্গলবার ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

নিহত দুইজনের সুরতহাল তথ্য: নিহত ওই পুরুষের দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। গোলাকার মুখমন্ডল ছিল আগুনে পোড়া। মাথার সামান্য চুল ও মুখে কিছু দাড়ি ছিল। গায়ে ছিল কালো জামা, দুই পায়ে কালো জুতা। আর ডান পায়ে কালো প্যান্টের অংশ লেগে ছিল। লাশের বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত পুরোটাই ছিল ছিন্নভিন্ন। বাঁ পায়ের মাংস গোড়ালির টাকনু পর্যন্ত কাটা। নিহত নারীর দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার ফুট বলে উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, তার মুখমন্ডল ছিল পোড়া, মাথায় সামান্য চুল দেখা গেছে। দুই হাত ও দুই পায়ের গিড়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ দেহ পোড়া এবং বাইরে থেকে কঙ্কাল দৃশ্যমান। একটি পায়ে সামান্য মাংস আছে এবং পায়ের তালুর নিচে আনুমানিক দুই ইঞ্চি কাটা। পুরুষের লাশটির সুরতহাল করেন মোগলাবাজার থানার এসআই মো. সোহেল রানা। আর একই থানার এসআই সুজন দত্ত নারীর লাশের সুরতহাল করেন।

কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানান, বিস্ফোরণে পোড়া ক্ষতবিক্ষত লাশ দুটি চেনার উপায় নেই। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবেই তাদের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এখন লাশ দুটি হিমাগারে রাখা আছে। পরিচয় নিশ্চিতের জন্য ডিএনএ নমুনা ও আঙুলের ছাপ রাখা হয়েছে। তিনি জানান, লাশগুলা কিছুদিন সংরক্ষণ করবেন তারা। এর মধ্যে স্বজনরা কেউ এলে পরীক্ষা করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে। আর তা না হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে সেগুলো সৎকার করা হবে। তিনি আরো জানান, মরদেহগুলো থেকে প্রসাব, মাথার চুল, নখ, যকৃত সংগ্রহ করা হয়েছে। জঙ্গিরা কোনো ধরনের উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়েছিল কি না এসব জানার জন্য সংগ্রহকৃত নমুনা ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য ঢাকায় পাঠাবেন চিকিৎসকরা। এর আগে সোমবার রাতে পুলিশ মরদেহ দুটির ডিএনএ সংগ্রহ করে।

এদিকে, আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মর্জিনা বেগম ও কাউছার আলী নামে দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে মাস তিনেক আগে নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। অভিযানের প্রথম দিন গত শুক্রবার পুলিশের আত্মসমর্পণের আহ্বানের জবাবে ওই বাসা থেকে এক নারী ও এক পুরুষকণ্ঠের কথাও শোনা যায়। ওই দুটি লাশের মধ্যে একজন আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নেওয়া সেই মর্জিনা বলেই ধারণা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই জঙ্গি আস্তানা ঘিরে ফেলার পর শনিবার সকালে সেখানে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোরা। গত সোমবার রাতে ওই ভবন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা জানিয়ে সামরিক গোয়েন্দা পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান সাংবাদিকদের জানান, ভেতরে চার জঙ্গির লাশ পেয়েছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist