গাজী শাহনেওয়াজ
গোয়েন্দা প্রতিবেদন
সুষ্ঠু ভোটে কুমিল্লায় ৩১, সুনামগঞ্জে ১০ ব্যক্তি ‘হুমকি’
৩১ জন স্থায়ী বাসিন্দা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে প্রতিবেদন দিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর (এনএসআই)। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুমকি তালিকার অধিকাংশ নাগরিক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত। এসব নাগরিক নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন হত্যা ও গুম মামলার আসামিও বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া প্রতিবেদন, যা পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদার কাছে পাঠানো হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিবেদনে ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে উপনির্বাচনের জন্যও এলাকার ১০ ব্যাক্তিকে হুমকি বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এনএসআইয়ের প্রতিবেদনে একটি মন্তব্য এবং তিনটি সুপারিশ রয়েছে সংস্থাটির; যার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে কমিশনকে। একটিতে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের জন্য আশঙ্কা করে বলেছে, আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা সিটি ও সুনামগঞ্জ সংসদীয় উপনির্বাচনে সন্ত্রাসী, গোলযোগ সৃষ্টিকারী ও অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডাররা যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করতে পারে, যা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের জন্য হুমকি। এ অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় করা তিন সুপারিশে বলেছে, সন্ত্রাসী, গোলযোগ সৃষ্টিকারী ও অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডার গ্রেফতারের জন্য নির্বাচনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ প্রদান, নির্বাচনের দিনসহ আগে-পরদিন নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ করে গোলযোগপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্তসংখ্যক ফোর্স মোতায়েন করা এবং নির্বাচনী এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।
নির্বাচন কমিশন সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনটি অতিগোপনীয়। তাদের দেওয়া মন্তব্য ও সুপারিশ যথাযথভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা শহর ও সুনামগঞ্জে পরিবেশ ভালো আজ। ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত একই ধরনের পরিবেশ বিরাজ করবে। কারণ অনেক ফোর্স মোতায়েন হয়েছে, তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘নির্বাচনকে স্ষ্ঠুু ও অবাধ করার জন্য বৈধ অস্ত্র ব্যবহারে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রধারী ক্যাডারদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওনারা পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য যারা হুমকি, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
ইসির নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব রাজিব হাসান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেকোনো নির্বাচনের আগে অবৈধ সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা তৈরি করে থাকে। বেশ কিছু ক্যাটাগরি ধরে তারা এ কাজটি করে থাকে। নির্বাচনী এলাকার মধ্যে কারা কারা সন্ত্রাসী, গোলযোগ সৃষ্টিকারী, অবৈধ অস্ত্রধারী, দলীয় ক্যাডারের নাম-ঠিকানা, দলীয় পরিচয়, প্রশ্রয়দাতা ও মামলা-সংক্রান্ত তথ্য। তবে সুনামগঞ্জের ১০ জন এবং কুমিল্লা সিটিতে ৩১ জনসহ মোট ৪১ জন এই দুটি নির্বাচনের জন্য হুমকি।
কুমিল্লা সিটির জন্য হুমকিজনক ব্যক্তিরা হচ্ছে-টিক্কা খানের ছেলে ইরান, অজ্ঞাত চর্থাতের ছেলে সাজ্জাদ ও জনি, রুস্তুম আলীর ছেলে রবিন, আদর্শ সদরের মো. নোমান, ঝাউতলার মো. ইয়াসীন, কাপ্তান বাজারের চোরা বদল ও কবির হোসেন, আদর্শ সদরের মো. রিয়াজ, রাব্বু ও চর্থা, বিষুপুরের কাজী জামান, চকবাজারের মো. রাসেল, হাউজিং এস্টেটের মো. জহির, কুমিল্লা আদর্শ সদরের মো. সাদি ও চর্থা, হযরত পাড়ার পিচ্ছি জালাল, কান্দিরপাড়ের আক্তার, ছোটরার সাগর, ছাতিপট্টির বেলাল, টমছম ব্রিজের মো. বাবু এবং কান্দিরপাড়ের জহিরুল ইসলাম রিন্টু।
আর সুনামগঞ্জের হুমকিদাতারা হচ্ছে-সাবু মিয়ার ছেলে গোলাপ মিয়া, ফজলুল হকের ছেলে লোকমান মিয়া, আবদুল মান্নানের ছেলে আমীর হোসেন ও আবদুল মনাফের ছেলে কফিল মিয়া।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা সিটি ও সুনামগঞ্জ উপনির্বাচনের ভোট। দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ দিনের মাথায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল সিইসি কে এম নুরুল হুদার কমিশন।
"