মেহেরপুর প্রতিনিধি
একুশ এলেই ডাক পড়ে এই দুই ভাষা সংগ্রামীর...
মেহেরপুর জেলার দুই ভাষা সংগ্রামী নজীর হোসেন বিশ্বাস ও ইসমাইল হোসেন। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকা ধর্মঘট চলাকালে ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি করা হয়। এ খবর পেয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে মেহেরপুরের ছাত্র-জনতা। আবুল কালামের সভাপতিত্বে কালাচাঁদ মেমোরিয়ালের সামনে এক সমাবেশ হয়। সমাবেশে সরকারের নীতি নির্ধারণের সমালোচনা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জোরালো বক্তব্য রাখা হয়। মুন্সি সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে তৎকালীন মেহেরপুর উচ্চ ইংরেজি মডেল স্কুলের মুসলিম হোস্টেলের ছাত্ররা পোস্টারিং, পিকেটিং-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সেই সময় অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন এই দুজন। ওই সময় ইসমাইল হোসেন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। নজীর হোসেন ছিলেন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।
১৯৫৩ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করতে গিয়ে পুলিশের নির্যাতনসহ কারাবরণ করতে হয় তাদের। ১৯৫৪ সালে তৎকালীন মেহেরপুর হাই ইংলিশ মডেল স্কুলের ছাত্ররা একুশে ফেব্রুয়ারি ক্লাস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল বের করে। শিক্ষকরা শত বাধা ও ভয়ভীতি দেখিয়েও তাদের একুশে ফেব্রয়ারি উদ্যাপন বন্ধ করতে পারেননি। সেদিন একুশ উদ্যাপন পালনের অপরাধে ইসমাইল হোসেন, নজীর হোসেন বিশ্বাস, আবুল কাশেম আঙ্গুর, সামসুল আলা, কদম রসুল, মোসারফ হোসেন, গোলাম কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পেলেও স্কুল কমিটির সিন্ধান্তে তাদের ফোর্স টিসি দেওয়া হয়। এদের মধ্যে আজ বেঁচে আছেন শুধু দুজনÑনজীর হোসেন বিশ্বাস ও ইসমাইল হোসেন। তবে তারা আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকরুদ্ধ প্রায়। তাদের দুঃখ শুধু একুশ এলেই তাদের ডাক পড়ে। আর কখনো ডাকা হয় না।
নজীর হোসেন বিশ্বাস সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। আজ তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানায়। তিনি ভাষা আন্দোলনের অগ্রগামী সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার কারণে তার বাবাকে পাকিস্তান বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মেহেরপুর সরকারি কলেজের কাছে বধ্যভূমি থেকে তার বাবার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নজীর বিশ্বাসের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি এলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট ও পোশাক দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বাবাকে। তবে বছরের অন্য সময়ে আর কেউ খোঁজ রাখে না। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভাষাসৈনিকের সম্মাননা ও উপহার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো সযতেœ তুলে রাখা আছে।
ইসমাইল হোসেন বর্তমানে মেহেরপুর শহরের টেলিফোন অফিসের পাশে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি সহসভাপতি হিসেবে দলে রয়েছেন। কয়েকটি জাতীয় দিবস ছাড়া আর কখনো কেউ তাদের খোঁজ নেন না। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন একুশ এলেই তাদের ডাক পড়ে। আর কখনো তাদেরকে ডাকা হয় না।
"