নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

বন বিভাগের প্রতিবেদন

ঠেঙ্গারচর এখনো বাসযোগ্য নয়

রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে সরিয়ে নোয়াখালীর যে দ্বীপে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে, সেই ঠেঙ্গারচর এখনো বাসযোগ?্য নয়। তবে সরকার উদ্যোগী হলে স্বল্প সময়ে কৃত্রিমভাবে অন্তত চারটি চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে ঠেঙ্গারচরকে মানব বসতির উপযোগী করা যায় বলে জানিয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কাছে মেঘনার মোহনায় একটি বিরান দ্বীপ ঠেঙ্গারচর। নানা প্রতিকূলতার কারণে এখনো সেখানে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী কোনো মানব বসতি গড়ে ওঠেনি বলে বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রায় পাঁচ হাজার একর আয়তনের ঠেঙ্গারচরকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা ঘোষণা করা হয় ২০১৩ সালে। ইঞ্জিনচালিত নৌযান ছাড়া সেখানে যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই। হাতিয়া থেকে এ দ্বীপের দূরত্ব আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ কিলোমিটার। হাতিয়া থেকে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা গত কয়েক দশক ধরে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে, বাইরেও আছে অনেকে। সব মিলিয়ে এই সংখ?্যা পাঁচ লাখের বেশি বলে সরকারি কর্মকর্তাদের ভাষ্য। এই রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশালসংখ?্যক এই শরণার্থীকে অন্তরায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। কক্সবাজারে গাদাগাদি করে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণেই সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছেন।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে চিঠি চালাচালির মধ্যে নোয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের নলচিরা রেঞ্জ কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন ভূঁঞা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন, তাতে বলা হয় যে ঠেঙ্গারচর ‘এখনো মানব বসবাসের উপযোগী হয়নি।’ এ ক্ষেত্রে পানীয় জলের কোনো উৎস না থাকা, দ্বীপটির প্রতিনিয়ত জোয়ার-ভাটায় ডুবে যাওয়া, দ্বীপের অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানটি এখনো স্থায়ী না হওয়া, পাড় থেকে নেমে উঁচু স্থানে যেতে হাঁটুসমান কাদার স্তর এবং নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে কারণ দেখান রেঞ্জ কর্মকর্তা। নোয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ‘কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নোয়াখালী জেলার চরাঞ্চলে স্থানান্তর’ বিষয়ে উপকূলীয় বন বিভাগের মতামত অধিদফতরে পাঠিয়েছেন তিনি। ঠেঙ্গারচরের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখনো এই চরে কোনো মানুষ নেই। এখানকার প্রধান সমস্যাÑঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাস, জোয়ারের পানি, বেড়িবাঁধ, স্থাপনা, পানীয় জল। চরে মানব বসতি গড়তে হলে এখানে সমস্যাগুলোর সমাধান করেই করতে হবে।’ তিনি জানান, প্রাকৃতিকভাবে চরটি গড়ে উঠতে বা মানববসতির উপযোগী হতে ১৫-২০ বছর লাগবে। কৃত্রিমভাবে প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলো শেষ করতে কয়েক বছর লাগতে পারে।

প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সরাতে সরকারের সিদ্ধান্ত হলে চরকে উপযোগী করতে যা দরকার তা করতে হবে। ...সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের অধিদফতরের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করব। সে ক্ষেত্রে যেসব অসুবিধা রয়েছে; যেমনÑপানীয় জল, বেড়িবাঁধ, অবকাঠামোগত স্থাপনা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকায় বন অধিদফতরের পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তা করা হবে। সেই সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাতে কাজ করবে। নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন অধিদফতরে এসে থাকতে পারে বলে জানান প্রধান বন সংরক্ষক।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানিয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের নতুন আবাস গড়ে তুলতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঠেঙ্গারচরের অবস্থা বর্ণনা করে হাতিয়া দ্বীপের ঘাসিয়ার চরকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয় রেঞ্জ কর্মকর্তার প্রতিবেদনে।

তবে তা বাস্তবসম্মত নয় বলে নোয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমির হোসেনের ভাষ?্য। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঠেঙ্গারচরে মানব বসতি সম্ভব নয় জানিয়ে বিকল্প হিসেবে ঘাসিয়ার চরকে বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে দিয়েছিলাম। এখন আর বিকল্পটি রাখিনি। ঘাসিয়ার চর লোকালয়ের কাছেই; ওই চরে রোহিঙ্গাদের রাখলে কক্সবাজারের যেসব ঝুঁকি রয়েছে তা বহালই থাকবে।’ এখন ঠেঙ্গারচরকেই উপযোগী করার বিষয়ে মতামত বন বিভাগের। আমির হোসেন বলেন, ‘ঠেঙ্গারচর বেশ রিমোট এরিয়া। এখানে তাদের স্থানান্তরে প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত হলে আইসোলেটেডভাবে থাকবে তারা; কোনো অপরাধেও জড়িত হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist