কূটনৈতিক প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

ওআইসি বৈঠকে ইশতেহার

সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিন

রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বঞ্চনা বন্ধের জন্য মিয়ানমারকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে বলেছে ওআইসি। ৫৭ দেশের মুসলিম জোট ওআইসি মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘নাগরিকত্ব’ ফিরিয়ে দিতে দেশটির কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠক শেষে প্রচারিত ১০ দফার ইশতেহারে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ওআইসির বিশেষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ওআইসির ওয়েবসাইট থেকে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে উদ্ধৃত করে দেশটির নিউ স্ট্রেইট টাইমস পত্রিকা জানিয়েছে, ওই সভা উদ্বোধনের সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের জন্য তিনি মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠক উদ্বোধন করতে গিয়ে নাজিব রাজাক বলেন, ‘মিয়ানমারের বন্ধু হিসেবে হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি, এই সমস্যা (রাখাইনে) সমাধানের এখন সময় হয়েছে। সমাধানের শুরু হিসেবে অবশ্যই হত্যা বন্ধ করতে হবে, ঘরবাড়ি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে, নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে, মুসলিম বলে আপনার প্রতিবেশী নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে নিপীড়ন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আর মানুষ হিসেবে তাদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’

ওআইসির বিশেষ ওই সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি তার বক্তৃতায় রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠী তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে বাস্তুচ্যুতির কারণে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর বারবার অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানান। বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয়ের জন্য আসা রাখাইনের মুসলিমদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি অবিলম্বে রাখাইনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য তিনি রাখাইনের মুসলিমদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। এ প্রসঙ্গে মিয়ানমারের এখনকার নাগরিকত্ব আইনে পরিবর্তন এনে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন তিনি।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ ও এর বাইরে থেকে মিয়ানমারের সব শরণার্থী এবং নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত নাগরিকদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করে টেকসই উপায়ে তাদের জন্মভূমিতে ফিরিয়ে নিতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য ওআইসিকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমারবিষয়ক ওআইসির বিশেষ দূত সৈয়দ হামিদ আলবার রোহিঙ্গাদের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ব্যাপক হারে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সহিংসতার মাধ্যমে সমন্বিত উপায়ে শাস্তি দেওয়ার প্রসঙ্গগুলোর উল্লেখ করেন। তিনি মিয়ানমারের সঙ্গে মানবাধিকার কাউন্সিলসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমান রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মানবিক ত্রাণসহায়তা বণ্টনের অনুমতি দিতে এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার তদন্তের জন্য মিয়ানমারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৈঠকের পর গৃহীত ইশতেহারে বলা হয়েছে, রাখাইনে সহিংসতার কারণে নিরীহ লোকজনের প্রাণহানি ও হাজার হাজার রোহিঙ্গার গৃহহীন হয়ে পড়ায় ওআইসি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইশতেহারে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অবিলম্বে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে মিয়ানমারকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বঞ্চনা রোধে সব পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতি পরিচয় অস্বীকারের অব্যাহত চেষ্টা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ওআইসি। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য ওআইসি এর মূলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের আবারও নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে (যা কেড়ে নেওয়া হয়েছে ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে) মিয়ানমারকে অনুরোধ জানিয়েছে ওআইসি।

রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির যাতে আরো বিপর্যয় না হয়, তা রোধ করতে মিয়ানমারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওআইসির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলকে রাখাইনের স্থানীয় কর্মকর্তা ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পেতে মহাসচিবকে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করার প্রয়াসে আন্তধর্ম ও আন্তসম্প্রদায় সংলাপ বাস্তবায়নের জন্য ওআইসি মহাসচিবকে জাতিসংঘ ও আসিয়ানকে নিয়ে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist