নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

নির্মূল কমিটির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি

ধর্মের নামে সন্ত্রাসে স্বাধীনতাবিরোধীরা

স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করতে ধর্মের নামে সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি আমাদের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করতে এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে ধর্মের নামে হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্কিত করতে চাইছে।’ ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রজতজয়ন্তী ও সপ্তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ধর্ম, বর্ণ ও জাতিসত্তার নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে ঘর ছাড়তে, দেশান্তরি হতে বাধ?্য হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে জঙ্গি দমনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ সরকার ও নাগরিক সমাজ মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করছে তা বহু দেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।’

রাষ্ট্রপতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পরমত সহিষ্ণুতাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ‘শ্রেষ্ঠ উপাদান’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কোনো অপশক্তি এই গৌরবময় অর্জনকে ম্লান করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ শুধু সংরক্ষণ নয়, এর বিকাশও ঘটাতে হবে।’ তিনি বলেন, শুধু ইসলাম নয়, কোনো ধর্মই নরহত্যা, সন্ত্রাস, ধ্বংসযজ্ঞ সমর্থন করে না। সকল ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা এবং সমাজ ও মানুষের কল্যাণ। তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। তাদের পরিচয়, তারা সন্ত্রাসী। এদের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হতে হবে, হতে হবে ঐক্যবদ্ধ।’

স্বাধীনতার দুই দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলন গড়ে ওঠা এবং সেই আন্দোলনে শহীদ জননী জাহানার ইমামের অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনা সম্পর্কে সচেতন করতে এ আন্দোলন বিশাল ভূমিকা পালন করে। আজ আপনারা এই আন্দোলনের রজতজয়ন্তী উদযাপন করছেন। গত ২৫ বছরে অনেক ঝড়ঝাপ্টা আপনাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। কিন্তু শত বাধা উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল থেকে আপনারা এই সময়ে অনেক অর্জনও করেছেন।’

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু করলেও তাকে হত?্যার পর সেই বিচার যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সে কথা মনে করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের মাধ?্যমে বহু প্রতীক্ষিত সেই বিচার কার্যক্রম আবারও শুরু হয়। সে সময় আবদুল হামিদ ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার। সেদিনের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে পুনরায় এই বিচার কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৯ সালে মহান জাতীয় সংসদে ১৯৭১ এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়। আমার সৌভাগ্য, তখন আমি স্পিকারের চেয়ারে আসীন ছিলাম।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন করেছে। বাঙালি আজ ‘অনেকটা’ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এ অনুষ্ঠানে পাঁচ শহীদ পরিবারকে সম্মাননা দেওয়া হয়। শহীদজায়া লিলি চৌধুরী, পান্না কায়সার, শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, সুচন্দা রায়হান ও সারা মাহমুদকে উত্তরীয় ও ক্রেস্ট দেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে রজতজয়ন্তী ও সম্মেলনের সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচারপতি গোলাম রব্বানী। অন?্যদের মধে?্য অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, নর্থ আমেরিকা জুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি উইলিয়াম স্পোন, ফোরাম ফর সেকুলার নেপালের আহ্বায়ক যুবনাথ লামসাল, সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী এরিক হুদলান্দ অনুষ্ঠানে বক্তব?্য দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist