প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে বিশ্বনেতাদের শেখ হাসিনা

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরে জলবায়ু তহবিলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ দূষণে কম ভূমিকা রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ দেশকেই বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সভায় বুধবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোস কংগ্রেস সেন্টারে ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক প্ল্যানারি সেশনে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

ডাভোস থেকে পাঠানো তথ্যে জানা গেছে, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইরনা সোলবার্গ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, এইচএসবিসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট গালিভার এই সেশনে অংশ নেন।

শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তরে অলাভজনক মডেল নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশকে ‘পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির’ পথে নেওয়ার চেষ্টার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এই অর্থের অন্তত অর্ধেক জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর কাছে যেতে হবে।’ নিজস্ব সম্পদ থেকে ২০০৯ সালে ৪০ কোটি ডলারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করার কথা আলোচনায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনে বাংলাদেশের ভূমিকা খুব সামান্য হলেও পরিবেশের ক্ষতির কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হচ্ছে, নিঃশব্দে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের কৃষক, জেলে ও নারীরা ঝুঁকিতে পড়ছে। তাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার দিকে ভালোভাবে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববাণিজ্য ও গবেষণায় এমন সমাধান বের করতে হবে যাতে জীবন, শস্য, কৃষি ও সম্পদ রক্ষা করা যায়।’

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের যে সীমা রয়েছে, তা অতিক্রম না করতে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কম কার্বন নিঃসরণ করে উন্নয়নের পথে এগোচ্ছি। আমাদের উৎপাদন খাতকে আমরা গড়ে তুলছি পরিবেশবান্ধব হিসেবে।’ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম বসানো হয়েছে; যা থেকে দেড় কোটি মানুষ সৌরবিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সৌরবিদু?্যৎ ব্যবহারকারী সবচেয়ে বড় জাতিতে পরিণত হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশের কৃষিব?্যবস্থাকে জলবায়ু সহনীয় করে গড়ে তোলা হচ্ছে। ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা হচ্ছে, যেগুলো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। ধান উৎপাদনে পানির ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার পাশাপাশি সেচকাজে সৌরবিদ্যুৎ ব?্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ধনী ও ক্ষমতাধরদের আলোচনা সভা হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নেতা হিসেবে অংশ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা। চার দিনের এ সম্মেলনে বিভিন্ন সেশনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বুধবারের এই সেশনে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে অনুসমর্থন জানিয়েছে এই আশা নিয়ে যে, বিশ্ব সম্প্রদায় যৌথ সমৃদ্ধির এই প্রচেষ্টায় তাদের দায়িত্বটুকু পালন করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে রক্ষার জন?্য প্যারিস চুক্তিকে অবশ?্যই কার্যকর করতে হবে।

‘পোশাকশিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ : এর আগে মঙ্গলবার ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৪৭তম বার্ষিক সভার ‘শেপিং এ নিউ ওয়াটার ইকোনমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তার সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরো বলেন, বেতন কাঠামো, কর্মস্থলের নিরাপত্তা, রীতিনীতি এবং শিল্প খাতে সহনশীল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প উচ্চতর মান অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম তৈরি পোশাক ও বস্ত্র রফতানিকারক দেশ। তিনি বলেন, এই খাতে ৪৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত আছেন এবং তাদের ৮০ শতাংশই নারী। আমাদের মোট রফতানির ৮৩ শতাংশই এই শিল্প খাতের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কারখানাগুলো বর্তমানে গ্লোবাল ব্র্যান্ড ও রিটেইলারদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি কারখানায় পেশাগত নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে, যেখানে শ্রমিক ও কর্মচারীরা একসঙ্গে কাজ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য চেষ্টা করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৮টি কারখানার এলইইডি সনদপত্র রয়েছে। বিশ্বের ১০টি শীর্ষ স্থানীয় পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে ৭টি বাংলাদেশে রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, তৈরি পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী দূষিত পানি শতভাগ শোধন এবং পানি ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার ‘২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ’-এর (ডব্লিউআরজি) সঙ্গে কাজ করছে। সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সবার জন্য নিরাপদ পানি এবং পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। ‘ওয়ার্ল্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট’র প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী এন্ড্রু স্টিয়ার-এর সঞ্চালনায় এই কর্মশালায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা অংশগ্রহণ করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist