নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ আগস্ট, ২০২০

জাতির পিতার রক্ত যেন বৃথা না যায় : প্রধানমন্ত্রী

মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নপূরণের জন্য শোক ভুলে আছি। বাবা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার যতটুকু সাধ্য সেইটুকু করে দিয়ে যাব, যেন তার আত্মা শান্তি পায়। গতকাল শুক্রবার সকালে ৫০ হাজারবার পবিত্র কোরআন খতম এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজসেবা অধিদফতর মিলনায়তনে এ দোয়া মাহফিলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে ১৫ আগস্টের শোক বুকে নিয়ে কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ একটা শোক সইতে পারে না। আর আমরা কী সহ্য করে আছি। শুধু একটা চিন্তা করে যে, এই দেশটা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আমার যতটুকু সাধ্য সেটুকু করে দিয়ে যাব, যেন তার আত্মাটা শান্তি পায় এবং এই রক্ত যেন বৃথা না যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ৮১ সালে আমি দেশে ফিরে আসি। স্বাভাবিকভাবে আমার চেষ্টাই ছিল যে, বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সয়েছেনÑ এ দেশের সেই মানুষের জন্য কিছু করে যাব, সেটাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে, তারা ঘৃণ্য। তাদের বিচার করেছি, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সেই শক্তি দিয়েছেন আমাদের। ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে দিয়ে তাদের বিচার করতে পেরেছি। এতে আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করি।

আওয়ামী লীগকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রেখে দেশসেবার সুযোগ করে দেওয়ায় দেশের মানুষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, যারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনকে, যারা সব সময় আমার পাশে থেকে আমাকে শক্তি জুগিয়েছে, একটা পরিবারের মতো আমি পেয়েছি। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ২০২০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ সময়ের মধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারের এতিম শিশু এবং ক্যাপিটেশন গ্র্যান্টপ্রাপ্ত ৩ হাজার ৯২৮টি প্রতিষ্ঠানের লক্ষাধিক এতিম শিশুর মাধ্যমে বর্ষব্যাপী এক লাখবার কোরআন খতমের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১৫ আগস্টের মধ্যে ৫০ হাজারবার কোরআন খতম হয়ে গেছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সরকারি শিশু পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, তোমরা ছোটবেলা থেকে তোমাদের বাবা-মাকে দেখতে পাওনি। অনেকে পিতাকে পাওনি বা মাকে পাওনি। আবার অনেকে কাউকেই পাওনি। কারো আদর, স্নেহ, ভালোবাসা সেটা যে কি জিনিস, সেটা তোমরা উপলব্ধি করতেই পারোনি।

তিনি বলেন, ১৫ অগাস্ট আমাদের জাতীয় শোক দিবস। জাতি হারিয়েছে তার নেতাকে আর আমরা হারিয়েছি আমার ছোট বোনটি এবং আমি, সেই সঙ্গে আমাদের পরিবারের অন্য সদস্য, আমরা আপনজনদের হারিয়েছি হঠাৎ এক দিন।

নিজের মায়ের স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, আমার মা (বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) মাত্র তিন বছর বয়সে তার মাকে হারিয়েছিলেন এবং মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বাবাকে হারান। ছিলেন দাদার কাছে। সাত বছর বয়সে দাদাও মারা যান। আমার দাদি আমার মাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। এতিমদের কষ্ট কেমন, তা নিজে উপলব্ধি করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই কষ্টটা আমরা বুঝি।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর সমাজসেবা অধিদফতর প্রান্তে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ উদ্দিন খান খসরু এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জয়নুল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close