হাসান ইমন

  ১৩ আগস্ট, ২০২০

পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও ঊর্ধ্বমুখী চালের দাম

বন্যা পরিস্থিতির পরও দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। যা দিয়ে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত অনায়াশে জনগণের চাহিদা মেটানো যাবে। এমনকি চাহিদা মেটানোর পরও কিছু উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশা করছে সরকার। তারপরও প্রতিনিয়ত বাড়ছে চালের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি পাইকারিতেই বেড়েছে ৭৫ থেকে ১০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি অসাধু চক্রের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে বাড়িয়ে দেয় দাম। এছাড়া পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে আলুর দাম।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণায় দেখা যায়, দেশে যে পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত জনগণের চাহিদা মেটানো যাবে। এমনকি দেশের সাড়ে ১৬ কোটি জনগণের চাহিদা মেটানোর পরও তখন ৫ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। যা দিয়ে পরবর্তী ৩৬ দিন থেকে ৭৮ দিনের চাহিদা মেটানো যাবে। ফলে

চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বা বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরও দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা নেই।

আরো বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এবার চালের উৎপাদন ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমে উৎপাদিত চালের উদ্বৃত্ত হিসাব করে দেখা যায়, গত জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে চাল মজুদ ছিল ২০ দশমিক ৩১ মিলিয়ন টন।

ব্রির গবেষণায় খাদ্য উদ্বৃত্তের কথা বলা হলেও গত কিছুদিন ধরে দেশে বেড়েই চলেছে চালের দাম। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে দেশে মোটা চালের (স্বর্ণা ও ইরি) দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। আর চিকন চালের (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

গতকাল রাজধানীর চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাঝারি মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি) বা ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা কেজি। ঈদের আগে তা ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা ছিল বলে রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আলমগীর জানান। তিনি বলেন, ঈদের পর চালের দাম বেড়েছে। ভালো মানের ব্রি-২৮ চাল ঈদের আগে ছিল কেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, আর এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে। ৫৪ টাকার নাজিরশাইল এখন ৫৮ টাকা কেজি। মোটার মধ্যে স্বর্ণা ২ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা কেজি। অন্যদিকে পাইজাম ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকার ভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। যা গত বছর এই সময় ছিল ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা। আর প্রকার ভেদে প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬৪ টাকায়। যা গত বছর এ সময় ছিল ৪৭ থেকে ৫৬ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে আউশ, আমন ও বোরো মিলে প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি বছর প্রায় ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে যা মোট উৎপাদন লক্ষ্যের ৫৩ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত বোরো মৌসুমে দেশে চালের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাস ও বন্যা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এবং দাম বাড়াচ্ছে। এমনকি এই ব্যবসায়ীরা চুক্তি অনুযায়ী সরকারি গুদামে চাল দিচ্ছে না। এতে সরকারি গুদামগুলোতে দিন দিন চালের মজুদ কমছে। অথচ চলমান করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে সরকার অসহায় দরিদ্র মানুষদের প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ টন চাল সাহায্য দিচ্ছে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, একটা অসাধু চক্র রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই দেশে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে। আর এ সংকট দেখিয়ে বাড়িয়ে দেয় চালের দাম। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই দুয়ের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আপাতত দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। চলমান বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও আমনের উৎপাদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজন হলে সীমিত আকারে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৫ টাকা। গত পাঁচ দিন আগেও আলু কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। আর এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। তবে সাদা গোলআলু ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যেটার আগে দাম ছিল ৩২ টাকা। আর লাল গোলআলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) অনলাইন তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ৮ আগস্ট আলুর দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। যা ৯ আগস্ট ২টা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ থেকে ৩৭ টাকা। এরপর ১০ আগস্ট কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এই দাম এখনো চলমান রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close