গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৩ আগস্ট, ২০২০

স্থলবন্দরের আধুনিকায়ন কাজে নজরদারি নেই

*স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে সংস্থাগুলো * সংসদীয় কমিটিতে ক্ষোভ

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে দেশের স্থলবন্দরগুলো আধুনিকায়নে নজরদারির অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছে বলে সংসদীয় কমিটিতে অভিযোগ মিলেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের স্বার্থ উপেক্ষা করে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করছে। লক্ষ্য বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটির সভা উত্তপ্ত ছিল গতকাল বুধবার। কমিটির সদস্যরা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন বলে উপস্থিত সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।

কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ জানিয়ে প্রকল্প চলমান স্থলবন্দর পরিদর্শনের জন্য কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা বলেন, প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসব নীতিবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানাবেন তারা। পরে কমিটির সভাপতি বিতর্ক এড়াতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ জানান। এ নীতিমালা প্রণয়ন করে স্থলবন্দরের অগ্রাধিকার কাজগুলো সম্পন্ন ও স্বচ্ছতা ফেরানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভা গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য শাজাহান খান, মো. মজাহারুল হক প্রধান, মাহফুজুর রহমান, মো. আছলাম হোসেন সওদাগর এবং এস এম শাহজাদা। তবে নৌ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী পর পর কমিটির দুই সভায় অনুপস্থিতি নিয়েও কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে মৃদু সমালোচনা হয়েছে। কমিটির দু-একজন সদস্য প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে দুঃখজনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সভায় কমিটির সদস্য ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা, কমিটি সংশ্লিষ্ট ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থাপিত স্থলবন্দর সংক্রান্ত কার্যপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ, সিলেট, হবিগঞ্জ, ফেনী, যশোর ও জামালপুর জেলায় ৭টি স্থলবন্দরের কাজ চলমান রয়েছে। গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর, এটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ২২ লাখ ৬২ হাজার টাকা। গত ২০১৮ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আসছে ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বিলম্ব ও চলমান কোভিড-১৯ এর কারণে আরো একবছর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশ রয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। প্রকল্পের কার্যক্রমে জমি অধিগ্রহণ, ব্যারাক, ডরমিটরি, ওয়্যারহাউস, ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, ওয়েব্রিজ, ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ডসহ অনেক কাজ হবে এই বন্দরে। এ প্রকল্পের ভৌত ২৯.৮২ শতাংশ। শেওলা, ভোমরা, রামগড় ও বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য বরাদ্দ ৬৯৩ কোটি ১৩ হাজার টাকা। ২০১৭ সালে নেওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাল্লা স্থলবন্দরের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এটাও ২০১৭ সালে নেওয়া প্রকল্প আগামী বছর জুলাইয়ে শেষ হবে। এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে করোনার কারণে অর্থছাড় বন্ধ রয়েছে। ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের উন্নয়নে ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থছাড়ের বিপরীতে কাজের অগ্রগ্রতি ৫১.৯২ শতাংশ। এছাড়া বিলোনিয়া ও বেনাপোল স্থলবন্দরে কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল নির্মাণ চলমান রয়েছে।

এসব বন্দরে সৌন্দর্যবর্ধনে যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে তারা নিজেদের সুুবিধা অনুযায়ী প্রকল্পের কাজকে এগিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তোলা হয় কমিটির সভায়। সংসদীয় কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কী ধরনের কাজ করা দরকার বন্দরের, সেদিকে মনোযোগ তাদের কম।

এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিরা। তারা বলেন, বন্দরের কাজে দৃশ্যমান হওয়ার জন্য শেড স্থাপন করা, টয়লেট নির্মাণ করা, বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা। কিন্তু এসব অপরিহার্য কাজে তাদের মনোযোগ কম। এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক ও ক্ষোভ। এক পর্যায়ে কমিটির সদস্যরা বন্দরের কাজ দেখভালে ও অগ্রগতি-অসঙ্গতি দেখতে সেখানে সরেজমিন যেতে একটি সংসদীয় সাব-কমিটি গঠনের দাবি উত্থাপন করেন।

পরে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, পাশের দেশগুলোতে বন্দরের কি ধরনের অবকাঠামো রয়েছে সেগুলো তদারকি করা এবং একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ জানান তিনি।

কমিটির সদস্য এস এম শাহাজাদা এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থলবন্দরের সৌন্দর্যবর্ধন বা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে ওই এলাকায় আমার নির্বাচনী আসন না। তবে কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এমপিরা এ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে বন্দরগুলো পরিদর্শন করা দরকার। আর প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে কিছুটা অসন্তোষ দেখা গেছে কমিটির সদস্যদের মধ্যে বলেও স্বীকার করেন নবীন এই আইনপ্রণেতা।

পরে সিদ্ধান্ত হয় স্থল বন্দরগুলোর কার্যক্রম আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একটি নীতিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা। এ বিষয়ে পাসের দেশের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে দ্রুত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি নৌপরিবহন অধিদফতর কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চলমান প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ তার পরিবারের সদস্যসহ অন্যান্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close