নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ আগস্ট, ২০২০

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত

করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা

* নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া * প্রতি সিটে যাত্রী

ঈদযাত্রার প্রথমদিকে যাত্রী কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচল করেছে। কিন্তু ঈদের আগের দিন এবং ঈদের পরের দিনগুলোতে যাত্রীর চাপ বাড়ায় চিত্র পাল্টে গেছে। গণপরিবহনে এখন সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বলাই নেই। প্রত্যেক সিটে যাত্রী বসিয়ে বাস চালাচ্ছেন চালকরা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে যাত্রীরা আশঙ্কা করছেন, তাদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন বাস চালকরা। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

যদিও পরিবহন মালিকরা বলেছিলেন, ঈদের সময় ভাড়া বৃদ্ধি পাবে না এবং সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাস চলাচল করবে। এসব বিষয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মনিটরিং করার কথা থাকলেও তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। অতিরিক্ত ভাড়া ও আসন ফাঁকা না রেখে যাত্রী কেন নেওয়া হচ্ছেÑ এর প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তবে কয়েকটি পরিবহন ছিল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যাত্রীর চাপ সত্ত্বেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালিয়েছে, ভাড়াও বেশি নেয়নি।

ঈদ পরবর্তী পঞ্চম দিন গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানীর গাবতলী টার্মিনালে যাত্রী নিয়ে প্রবেশ করে ‘রয়েল পরিবহন’। পরিবহনটিতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসের প্রতি দুই আসনে একজন যাত্রী বহন করার কথা। সে হিসাবে করোনাকালে দুই আসনে একজন যাত্রী হিসেবে সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত বাসের ভাড়া হয় ৭০০ টাকা। এখন স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে প্রতি আসনেই যাত্রী বহন করা হচ্ছে। ভাড়াও নেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। একই দৃশ্য দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা থেকে গাবতলীতে আসা ‘পূর্বাশা পরিবহনে’। ওই পরিবহনের যাত্রী নাসিম আলী বলেন, ‘ভাড়া বেশি নিয়েছে আবার স্বাস্থ্যবিধিরও কোনো বালাই নেই।’ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থেকে আসা ‘সুবর্ণ’ ও ‘সাউদিয়া পরিবহনে’ও একই দৃশ্য।

মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় ফেরা যাত্রীর অতিরিক্ত চাপ নেই। তারপরও বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যাত্রী বহন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। ঢাকার একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন নোয়াখালীর সাজিদ। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় তিনি এমন পরিস্থিতির শিকার হন। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো ঈদের পর স্বাভাবিক নিয়মে বাস চলবে। কিন্তু গত বুধবার ঢাকার আসার সময় তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। অতিরিক্ত ভাড়া গুনে তিনি নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী বাসে উঠে তিনি দেখতে পান কোনো আসন ফাঁকা রাখা হয়নি। সব আসনেই যাত্রী। এ সময় এক যাত্রী আসন ফাঁকা না রাখার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলা হয় বলে জানান সাজিদ।

দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না এবং এক আসন ফাঁকা থাকার কথা থাকলেও দুই আসনেই দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী নেওয়া হচ্ছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বীকার করে বলেন, সব বাসে নয় কিছু কিছু বাসে এমনটা হচ্ছে বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আর এ বিষয়ে বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। তারা বিষয়টা দেখছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর পরিচালক (প্রশাসন) মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, গণপরিবহনে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা, দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যদি আমাদের অজ্ঞাতে কোনো পরিবহনে এমনটা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাত্রীরা ৯৯৯-কল করেও এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে পারেন।

এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি বেশিরভাগ রোডের বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি। এ বিষয়ে মনিটরিংয়ের জন্য বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকলে তাদের কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়েনি। মালিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ তো তাদের স্বার্থ দেখবে, তাহলে যাত্রীদের স্বার্থ দেখবে কে। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেÑ এমন কোনো বিবৃতি বা সংবাদও আমাদের চোখে পড়েনি। যাত্রীরা প্রতিকার পায় না বলেই সেখানে এখন অভিযোগ দিতে যায় না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close