নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ জুলাই, ২০২০

বাঙালির শোকের মাস কাল থেকে

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবর রহমান/দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান/তবু নাহি ভয়, হবে হবে জয়, জয় মুজিবর রহমান। আগামীকাল শনিবার থেকে থেকে শুরু হচ্ছে শোকের মাস আগস্ট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এ মাসের ১৫ তারিখে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকচক্র। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।

আগস্ট মাসজুড়ে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘৃণা, ধিক্কার জানাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যাকারীদের যাদের কারণে একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা আবার রাজনৈতিক অপতৎপরতা শুরু করা ও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল, গণতন্ত্রকে হত্যা করে সামরিকতন্ত্র এসেছিল।

১৯৭৫ সালের মধ্য ভাগে এই বেদনাবিধূর ও কলঙ্কিত ঘটনা ঘটে। ১৫ আগস্ট নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান এই স্থপতির বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় শ্যামল বাংলার মাটি। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর রাষ্ট ্রক্ষমতায় আসীন অপশক্তি অপচেষ্টা চালায় মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ ও চেতনাকেও হত্যা করার। সংবিধান স্থগিত করার পর তারা দালাল আইন বাতিল করার অধ্যাদেশ জারি করে একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের রাজনীতির পথ খুলে দেয়।

চক্রান্তকারী ও উচ্চাভিলাষী সদস্যের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ১৫ আগস্টের কালরাতে আরো প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল এবং দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল। প্রবাসে থাকায় জীবন রক্ষা পায় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার। নির্মম সেই হত্যাযজ্ঞে আরো নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, শিশুপুত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, নিকটাত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন নিরাপত্তা কমকর্তা-কর্মচারী। জাতি শোকের মাসে গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে এসব শহীদকেও।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আরোপ করে এর বিচারের পথও রুদ্ধ করা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কলঙ্কিত সেই অধ্যাদেশ বাতিল ও জাতির পিতা হত্যার বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া ও নানা কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের চূড়ান্ত রায় এবং পাঁচ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে পুরো জাতি এখনো প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে বঙ্গবন্ধুর বাকি সব পলাতক খুনির ফাঁসি কার্যকরের মাহেন্দ্রক্ষণের। বিদেশে পালিয়ে থাকা এই খুনিদের অনুসন্ধান করে ফিরিয়ে এনে দ- কার্যকর এখনো সম্ভব হয়নি।

এই আগস্টেই ঘটে জাতির ইতিহাসের আরো একটি বিয়োগান্তক ঘটনা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো হয় ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে চালানো ওই গ্রেনেড হামলা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও ঝরে যায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪টি তাজা প্রাণ।

শোকের মাস আগস্টের প্রথম প্রহরে দলীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলোর নানা কর্মসূচির মধ্যে রাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোর মিছিল, শপথ গ্রহণ ও জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দল ও সংগঠন শোকের মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু করেছে।

বিভিন্ন দল ও সংগঠন শোকের মাসের প্রথম দিনে দেশজুড়ে সীমিত পরিসরে কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সারা দেশের মানুষ শোকের প্রতীক কালোব্যাজ ধারণ করবে। রয়েছে শোক র‌্যালি, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি ও বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে তার প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রভৃতি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close