নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ জুলাই, ২০২০

খুলনায় হচ্ছে শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হলো ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় এই বৈঠক শুরু হয়, শেষ হয় পৌনে ১টার দিকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। বৈঠকে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিসভা কক্ষে সাতজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘আজকে ভার্চুয়ালি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে। আমরা সচিবালয়ে ছিলাম, প্রধানমন্ত্রী সেখানে ছিলেন।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (মন্ত্রিসভা অধিশাখা) মো. রাহাত আনোয়ার জানান, ‘ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন, সেখানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস স্যারও ছিলেন। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যার ছাড়াও সাতজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব যুক্ত ছিলেন।’

সচিবালয় প্রান্তে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ভিডিও কনফারেন্সের মধ্যমে যুক্ত ছিলেন। এসব মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে। এদিকে খুলনায় হচ্ছে দেশের পঞ্চম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, খুলনা ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুমোদনের কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, সেবার মানোন্নয়ন এবং সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে মর্মে সরকারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সরকারের চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনা জেলায় শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।’ মন্ত্রিসভা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সাধারণত প্রতি সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কিংবা সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত থাকেন।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এর আগে গত ৮ জুন জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এরপর অবশ্য ১১ জুন বাজেট অনুমোদনের বিশেষ মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। পরে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় কয়েক দফায় ছুটি বাড়ে। গত ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি ছিল দেশে। টানা ৬৬ দিনের ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা মানা সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বন্ধ থাকা গণপরিবহনও (বাস, লঞ্চ, ট্রেন) চালু হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত বিশেষজ্ঞ ও গবেষক তৈরি করার লক্ষ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য। ‘প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রণীত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনে মোট ৫৫টি ধারা রয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধিমালা, প্রবিধানমালা ও সংবিধি প্রণয়নের বিধান রাখা হয়েছে।’

খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইনের ৪ থেকে ৬ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এখতিয়ার এবং ক্ষমতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ৯ ধারা ও ৪৩ ধারায় যথাক্রমে পরিদর্শন ও আর্থিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভূমিকা উল্লেখ রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘১০ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী এবং ১২ থেকে ১৮ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, ক্ষমতা ও দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।’

‘১৯ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এবং ২০ থেকে ৩৪ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল অনুষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় কমিটি ও শৃঙ্খলা বোর্ড গঠন এবং এদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।’ মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে রাষ্ট্রপতি এবং স্পিকারের মনোনীত প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অংশীজন ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সিন্ডিকেট গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। সিন্ডিকেটে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘খুলনা বিভাগের আওতাধীন সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট এবং চিকিৎসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেডিকেল প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে।’ এই আইনের মাধ্যমে চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটবে। প্রস্তাবিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে খুলনা বিভাগে উন্নত চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারিত হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close