প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৩ জুলাই, ২০২০

দ্বিতীয় দফায় বন্যার হানা

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল রোববার জানানো হয়, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা, কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে এবং পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।

যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিপৎসীমার ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের সাঙ্গু, হালদা ও মাতামুহুরী নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে, আমাদের গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ধোবউড়া (ময়মনসিংহ) ও দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিরা তাদের এলাকার বন্যা পরিস্থিতি জানাচ্ছেন।

গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২৭ সে.মি. এবং তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঘাঘট, কাটাখালি, বাঙালী ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে বলে জানানো হয়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি দ্বিতীয় দফায় আবার অবনতি হয়েছে। সাঘাটা, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বসতবাড়ি আবার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে এবং ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের মানুষ নৌ-ডাকাতের আতঙ্কে ভুগছে। তিনি পুলিশের নৌ-টহল জোরদারের দাবি জানান।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে আট উপজেলার অর্ধশতাধিক ইউনিয়নে আবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম দফার রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চরাঞ্চলসহ নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী লাখো মানুষ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল রোববার বিকাল ৩টায় পাওয়া তথ্যানুযায়ী ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সে.মি. ও তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার দুই সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সে.মি. ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।

লালমনিরহাট : ভারতের গজলডোবার পানি ছেড়ে দেওয়ায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদী এখন তার রুদ্রমূর্তি ভাব ধারণ করেছে। ফলে তিস্তার বামতীরে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনেই হুহু করে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চল ও তীরবর্তী গ্রামের ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চরে বাদাম ও ভুট্টাসহ নানা জাতের সবজির খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। তিস্তার বামতীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সবগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা ব্যারেজ রক্ষায় ৪৪টিই জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এ বন্যা কিছুটা সময় স্থায়ী হতে পারে বলেও জানান তিনি।

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) : জেলার ধোবাউড়া উপজেলায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে গামারীতলা, পোড়াকান্দুলিয়া, দক্ষিণ মাইজপাড়া, ঘোঁষগাও, বাঘবেড় (কিছু অংশ), ধোবাউড়া সদর (কিছু অংশ), গোয়াতলা (কিছু অংশ) ইউনিয়নে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। গামারীতলা ইউনিয়নের কামালপুর ও পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মানুষজন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কলসিন্দুর থেকে রনসিংহপুর ও দুধনই পাকা রাস্তাটির বিভিন্ন অংশে পানির নিচে।

দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দ উষান গ্রামে পনের দিনের ব্যবধানে ফের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার ভোর বেলায় সরেজমিনে ভাঙন এলাকা ঘুরে এমন এ দৃশ্য দেখা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close