জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১২ জুলাই, ২০২০

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ

অপরাধীরা দলে কীভাবে জানতে চায় তৃণমূল

সম্প্রতি প্রতারক সাহেদ করিমের ইস্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের প্রাণখ্যাত পদবিহীন ‘তৃণমূল কর্মীরা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন ঝড় বইতে শুরু করেছে দলের ভেতরে এবং বাইরে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা, হাইব্রিডদের দলে জায়গা করে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন আঙুল উঠেছে দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে। পাপিয়া কান্ড, জি কে শামিম, ক্যাসিনো খালেদ, এনু-রুপন ভূঁইয়া আর সবশেষ সাহেদ কান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতারা।

তারা বলছেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ বা এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে পদ পাওয়া নেতাদের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা। বিশুদ্ধ নেতাদের ছাপিয়ে তাদেরই জয়জয়কার বহু দিন ধরে। তাদের অভিযোগ, বহু হাইব্রিড এখনো দলে ঘাপটি মেরে আছে। কিন্তু তারা দলের শীর্ষস্থানীয় কজন নেতার ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছেন না যোগ্য নেতাকর্মীরা। ফলে অযোগ্যরা ছত্রছায়াকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার কোটি টাকা। তারা কোন দরজা দিয়ে দলে ঢোকে, দলের কারা এদের লালন-পালন করছেনÑ এসব বিষয়ে উত্তর চান তৃণমূল নেতারা।

পদহীন তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজের উপস্থিতি দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে। এই দূষণকারীদের সংখ্যা দলে যত বেশি বাড়বে, দলটির রাজনৈতিক আচরণের খারাপ দিকটি তত বেশি স্পষ্ট হবে।

দলীয় সূত্রমতে, দলটির দুর্দিনে যেসব নেতাকর্মী দলের পাশে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে ছিলেন, তাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায় সেসব হাইব্রিড নেতার নেতিবাচক কর্মকান্ডের কাহিনি। অপরাধীরা দলে প্রভাবশালী হয়ে নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলার মধ্যেই সীমারেখা থাকে না, মামলা-হামলা পর্যন্ত চালিয়ে যান।

তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একাদশ জতীয় নির্বাচনে জয়ের পর দলে হাইব্রিড ও অতি উৎসাহী লীগারদের উৎপাত বেড়েছে। রাজনৈতিক সংকটের সময় এদের দেখা যায়নি। দুঃসময়ে তারা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। সভা-সমাবেশ, রাজনৈতিক তৎপরতা এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও অতি আওয়ামী লীগারদের কোনো তৎপরতা ছিল না। বর্তমানে সরকারকে সুবিধাজনক অবস্থানে দেখে আবার মাঠে নেমেছেন অতি আওয়ামী লীগাররা। নামসর্বস্ব সংগঠন তৈরি করে দলের ভেতরে-বাইরে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এসব সংগঠনের নেপথ্যে কাজ করছেন সুবিধাভোগী একশ্রেণির হাইব্রিড আওয়ামী লীগার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠপর্যায়ের তৃণমূলের একাধিক নেতা জানান, দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা যাচাই-বাছাই না করেই দলে পাপিয়া, খালেদ, শাহেদের মতো লোকদের দলে স্থান দেন। এ ছাড়াও অন্য সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কিছু প্রতারক দলের ভেতরে প্রবেশ করছে। তাদের মূল লক্ষ্য দলের দুর্নাম ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। তারা অবিলম্বে এ ধরনের ভুঁইফোঁড় সংগঠন বন্ধ করার দাবি করেন।

এসব বিষয়ে সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য জিয়াউদ্দিন শিপু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সুবিধাভোগী আর নব্য আওয়ামী লীগারদের ভিড়ে তৃণমূলের দীর্ঘকালের পরীক্ষিত নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা। দলের দীর্ঘ পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা হাইব্রিডদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চান। অতি দ্রুত প্রতারক চক্রকে ভেঙে এদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন।

তবে এদের বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দলের বর্তমান নেতৃত্ব কিন্তু এক দিনে সৃষ্টি হয়নি, এই সৃষ্টির পেছনে দীর্ঘ ত্যাগ সংগ্রাম রয়েছে। এক দিনে নেতা হওয়া যায় না। তাই দলের গঠনতন্ত্র মেনে প্রতারক বা চিহ্ন অপরাধীদের বাদ দিয়ে যোগ্য, ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। করোনা গেলে প্রতারকদের দল থেকে ছেঁকে ফেলা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close