নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জুলাই, ২০২০

পুরোনো চেহারায় ঢাকা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই সচল হলো রাজধানীর চাকা। নগরের ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে ভিড় বাড়ছে। সেই আগের বিশৃঙ্খলায় ফিরেছে বাস সার্ভিস। তোয়াক্কা নেই স্বাস্থ্যবিধির। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যাত্রী এবং বাস সংশ্লিষ্টদের। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামাসহ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পুরোনো বিশৃঙ্খল হালচালে ফিরেছে নগর সার্ভিস। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এখনই গণপরিবহনের লাগাম টেনে না ধরলে আরো ভয়াবহ হতে পারে করোনা সংক্রমণ।

গতকাল নিউমার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক, গাউছিয়া, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাত থেকে শুরু করে ছোট বড় মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে অসংখ্য ক্রেতা। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে মার্কেটে এসেছেন। ক্রেতাদের উপস্থিতিতে বিক্রেতাদের মুখেও হাসি ফুটেছে। একাধিক দোকানি জানান, গত ১ জুন থেকে মার্কেট খোলা থাকলেও মূলত এ মাসের শুরু থেকে তুলনামূলকভাবে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আজ যারা মার্কেটে আসছেন তারা কেনাকাটা করতে আসছেন। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।

বড় বড় মার্কেট ও শপিংমলের প্রবেশপথে জ্বর পরিমাপক যন্ত্র এবং জীবাণুনাশক টানেলের ব্যবস্থা থাকলেও ফুটপাতে এসবের বালাই নেই। অধিকাংশ ক্রেতা এবং বিক্রেতার মুখে মাস্ক পরিধান করতে দেখা গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। তবে কাউকে কাউকে আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা যায়। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে আসেন লালবাগের বাসিন্দা আবদুস সালাম। তিনি বলেন, গরমের মধ্যেও দোকানিরা এসি চালাচ্ছেন না। একদিকে বেচাকেনা কম হওয়া অপরদিকে এসির বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি, তাই এসি চালাচ্ছেন না বলে অনেক দোকানি তাকে জানান।

এলিফ্যান্ট রোড এলাকার জুতার দোকান মালিক সোহেল রহমান জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার ক্রেতার ভিড় বেশি থাকে। বেচাকেনা যাই হোক করোনা ভীতি কাটিয়ে লোকজন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে এতেই তিনি খুশি বলে জানান।

শপিংমলগুলোতে ফুটপাতে বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। ফুটপাতের হকাররা জানান, এই করোনাকালেও নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যথায় তাদের ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয় না।

বিভিন্ন বাসে যাত্রীও বেড়েছে। মুখে মাস্ক নেই যাত্রীর। নেই বাসের ড্রাইভার বা সহকারীদেরও। রাজধানীর নগর সার্ভিসে গাছাড়া ভাব স্বাস্থ্যবিধি মানায়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারেও এসেছে ঢিলেমি।

এদিকে, বাস থামিয়ে যত্রতত্র চলছে যাত্রী উঠানো বা নামানো। যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী তোলা ও ভাড়া আদায়ের। অপরদিকে, বাস সংশ্লিষ্টদের অস্বীকারের সুরটা বেশ চড়া। তবে মাঠে আইন ভাঙার দায় নিচ্ছে না বাস মালিক সমিতি।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, এ রকম যদি কেউ করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

বিশেষজ্ঞের মতে, লকডাউনের সময়টায় সড়কে শৃঙ্খলা আনার সুযোগ হারিয়েছে সরকার। আর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে ঠেকানো যাবে না করোনার প্রকোপ। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ১৪ লাখ গাড়িকে ম্যানেজ করা সম্ভব নয়।

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, গণপরিবহনের ধরার ও বসার জায়গাটা নতুন নতুন মানুষ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশৃঙ্খলার অভিযোগ অনেকটা অস্বীকার করে প্রয়োজনে আরো কঠোর হওয়ার অভিযোগ বিআরটিএ’র।

বিআরটিএর পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এটা সঠিক না। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলছি, তবে দুই একটাতে সমস্যা হতে পারে।

নীলক্ষেতে বই কিনতে আসেন মগবাজারের বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আবদুল লতিফ ও তার স্ত্রী শামসুন্নাহার। প্রয়োজনীয় বইটি কিনে তারা বাসায় ফেরার জন্য রিকশা ঠিক করেন। রিকশায় চড়ার আগে ব্যাগ থেকে স্যানিটাইজার বের করে রিকশার সিটে স্প্রে করে তবেই উঠে বসেন তারা।

আবদুল লতিফ বলেন, রাস্তাঘাটে এত মানুষের ভিড় দেখে ভয় লাগছে। কখন কার মাধ্যমে কে যে আক্রান্ত হয় বলা মুশকিল। সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে তিনি যেকোনো যানবাহনে উঠার সময় নিজের কাছে থাকা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নেন।

আবদুল লতিফের মতো খুব কম লোকই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছেন। অধিকাংশ মানুষই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে উদাসীন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close