আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১১ জুলাই, ২০২০

প্রতিদিন শনাক্ত গড়ে ২ লাখ

বিশ্বব্যাপী করোনার রূপ ভয়ংকর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বজুড়েই আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসের প্রথম আট দিনের মধ্যে চার দিনই শনাক্ত হয়েছে ২ লাখের বেশি মানুষ। বাকি চার দিন ছিল ২ লাখের কিছু কম। এর আগের মাসে এই হার ছিল দেড় লাখের কম। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সময় আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়বে বলে আগেই সতর্ক করেছিল। বর্তমান সময়ে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে দিনে দিনে। ছয় সপ্তাহে রোগী দ্বিগুণ হয়েছে। করোনা মহামারির বৈশ্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে বিশ্বজুড়ে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ১৬ লাখ রোগী। মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার। অর্থাৎ গড়ে দিনে ২ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের। অথচ গত জুনেও দৈনিক গড়ে দেড় লাখের কম রোগী শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন সাড়ে ৪ হাজারের কিছু বেশি। ওই মাসে বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্ত হয়েছে ৪৩ লাখ ২৬ হাজারের বেশি রোগী, মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের।

করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক হিসাব প্রকাশ করছে ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফো। এ ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭২ লাখ ২৫ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের।

সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো শীর্ষ দেশ। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশটিতে তারপর থেকে যে মহামারি পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, তার আর উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বরং দিনে দিনে আরো অবনতি ঘটছে পরিস্থিতির। যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৩২ লাখ ছুঁই ছুঁই। মৃত্যু ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে ৬১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দেশটিতে এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। এ দিন যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন আরো ৮৯০ জন রোগী।

করোনার সংক্রমণে প্রথমে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য হিমশিম খেয়েছে। সেই নিউইয়র্ক সামলে উঠলেও এখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া আর ফ্লোরিডায় যেন সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টেক্সাস কর্তৃপক্ষ আবার লকডাউন করেছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলো বিভিন্ন শহর কর্তৃপক্ষ আবার লকডাউনের পথে হাঁটছে। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব অঙ্গরাজ্যে করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, সেগুলোর তালিকা করলে লুইজিয়ানা থাকবে নিচের দিকেই। তারপরও এখানকার গভর্নর জন বেল এডওয়ার্ডস গত বুধবার বলেছেন, ‘আমাদের অঙ্গরাজ্যজুড়ে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আর এ রোগ এক বা দুই এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই।’

সিএনএন জানায়, ফ্লোরিডার অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেখানকার হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রগুলোর (আইসিইউ) ধারণক্ষমতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। গত বুধবার এখানকার ৪২টি হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের সব আইসিইউ শয্যা রোগীতে ভরা। নতুন করে আর আইসিইউতে রোগী রাখা সম্ভব নয়।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলেও। দেশটিতে ১৭ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মারা গেছেন ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ। পেরু, চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতিও দিনে দিনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোর অবস্থাও ততটা ভালো নয়।

সংক্রমণ ও মৃত্যুতে তৃতীয় শীর্ষ দেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভারত। এ দেশেও সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন। কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই ২০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে। দৈনিক মৃত্যুও ৫০০ জনের আশপাশে থাকছে। এর মধ্যে ৪ জুলাই মারা যান ৬১০ জন, যা এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। ভারতে ৭ লাখ ৮০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ২১ হাজারের বেশি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close