নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০২০

হেফাজতে ইসলামে পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক পদ পরিবর্তন নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমিরপুত্রের ফোনালাপ আর মহাসচিবের বিবৃতি ফের আলোচনার টেবিলে নিয়ে এসেছে সংগঠনটিকে। হেফাজতে ইসলামের কর্মকান্ডের বড় একটি অংশের কেন্দ্রবিন্দু এই হাটহাজারী মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসা পরিচালনা নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে চলছে আল্লামা শফি আর বাবুনগরীর দ্বন্দ্ব। যার পরিপ্রেক্ষিতে পদ হারান বাবুনগরী। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব এখন হেফাজতেও। যাতে দুই পক্ষের অনুসারীরা বেশ সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

এমন বিভক্তিতে কোনপথে হেফাজতের ভবিষ্যৎ, উঠেছে সে প্রশ্ন। কেননা কওমি মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি বারবার নিজেদের অরাজনৈতিক বলে দাবি করে এলেও কার্যত অনেক রাজনৈতিক ইস্যুতেই সরব থেকেছে হেফাজত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হেফাজত নিজেদের ইসলামী সংগঠন দাবি করলেও তাদের রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লেষ। আর তা জড়িয়ে আছে অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় আর ভোটের মাঠে ভূমিকা রাখায়। ফলে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে মরিয়া সবাই।

নারী নীতি ইস্যুতে আত্মপ্রকাশ করা হেফাজত ইসলাম আলোচনায় আসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা এবং শাপলা চত্বরে অবস্থানের মাধ্যমে। যার পরিচালনা পরিষদের অনেক নেতাই বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তবে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, হেফাজতে ঘাপটি মেরে থাকা ‘সিন্ডিকেট’ নাস্তিক্যবাদীদের খেলনায় পরিণত হয়েছে। এ সিন্ডিকেট হেফাজত এবং তার ছেলে আনাস মাদানীর নামে কুৎসা রটাচ্ছে। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনাস মাদানী স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে সংগঠনটিতে চলমান বিরোধ আরো স্পষ্ট হয়েছে।

আহমদ শফী একাধারে হাটহাজারী দারুল উলুম মইনুল মাদ্রাসার মহাপরিচালক, দেশের কওমি মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রক সংস্থা জামিয়াতিল কাওমিয়ার চেয়ারম্যান এবং সর্ববৃহৎ কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদরাসিল আর‌্যাবিয়ার সভাপতি। ৯৭ বছর বয়সি আহমদ শফীর উত্তরসূরি কে হবেন তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিরোধ চলছে হেফাজতে।

হেফাজত মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে তার উত্তরসূরি মনে করা হতো। দেশের কওমি ঘরনার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। গত ১৫ জুন তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে আনাস মাদানীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাওলানা শেখ আহমদকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এই বষিয়ে নিয়ে আল্লামা শফী বিবৃতিতে বলেন, ইসলামের হেফাজতে আত্মপ্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম। নাস্তিক্যবাদী অপশক্তি যখন আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) অবমাননা করে তখন হেফাজত গর্জে উঠে।

২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর হেফাজত আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) অবমাননাকারীর মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে আইন প্রণয়নসহ ১৩ দফা দাবিতে তারা রাজপথে নামে।

২০১৩ সালে ৫ মে রাতে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজত কর্মীরা। তাদের উচ্ছেদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরদিন বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়। আহমদ শফীকে বিমানে চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে হেফাজতে দুটি ধারা।

আহমদ শফী বিবৃতিতে বলেন, হেফাজত রাজনৈতিক দল নয়। সরকারের পক্ষের কিংবা বিপক্ষের শক্তি নয়। পরিতাপের বিষয়, একটি চক্র হেফাজতকে বিরোধী দলের ভূমিকায় নিয়ে যেতে চায়, যা হেফাজতের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিবৃতিতে আল্লামা শফী বলেন, ইসলামবিরোধী অপশক্তি হেফাজতকে প্রকাশ্যে মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে পেছনের দরজা দিয়ে হামলা করছে। হেফাজতে থাকা সিন্ডিকেট ভেতর থেকে হেফাজত, হেফাজতের ত্যাগী নেতা, আমার ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close