নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি শুরুতে মানা হলেও এখন উপেক্ষিত

রাজধানীর গণপরিবহন

করোনায় সামাজিক দূরত্ব মানতে বাস-মিনিবাসে যত সিট তার অর্ধেক যাত্রী নেবে বলে ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সামাজিক দূরত্ব অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে। আর বাসভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। এছাড়া করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা থাকলেও বিভিন্ন বাসে দেখা যাচ্ছে তার উল্টো চিত্র। দুটি সিটে একজন করে যাত্রী নেওয়ার পর বাস পূর্ণ হলেও অনেক বাসেই দেখা গেছে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে। তবে যাতায়াত যেভাবেই হোক না কেন, ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের।

এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বাসে শতভাগ যাত্রীই শুধু নয়, বাদুড়ঝোলা যাত্রীদের যাতায়াতের ছবিও ছাপা হয়েছে। এই পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তান এলাকায়। সকালের দিকে কিছুটা সামাজিক দূরত্ব দেখা গেলেও বিকালে অফিস ছুটির পর পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আগেই বলেছিলাম বাসে বিশেষ করে সিটি সার্ভিসে সামাজিক দূরত্ব মানা হবে না। কারণ এখানে কোনো টিকিট সিস্টেম নেই। বাসেই নগদে ভাড়া আদায় করা হয়। তাই যাত্রী ওঠা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। মালিকরা আসলে করোনাকে বাসভাড়া বাড়ানোর কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছে। তাই এখন সামাজিক দূরত্ব মানা না হলেও ঠিকই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এটা আর কমবে বলে মনে হয় না। আর সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, বাসভাড়া আগেই মালিকরা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৬ সালে যে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল তার চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ বেশি ভাড়া তারা আগেই নিত। এখন কৌশলে ৬০ ভাগ বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে ঢাকার সায়েদাবাদের দূরত্ব ২০৮ কিলোমিটার। আগে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪২ পয়সা। শতকরা ৬০ ভাগ বাড়লে হয় ২ টাকা ২৭ পয়সা। এর সঙ্গে যদি ব্রিজের টোল যোগ করা হয় ২৫ টাকা তাহলে এখন যাত্রীপ্রতি ভাড়া হওয়ার কথা ৪৭৫ টাকা। কিন্তু যাত্রী প্রতি বিভিন্ন পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ৭৬০ থেকে ৮০০ টাকা।

গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস নতুন ভাড়ায় চার দিন ধরে চালু হলেও এখনো ভাড়ার কোনো তালিকা প্রকাশ করেনি বিআরটিএ। তালিকায় বিভিন্ন রুটের দূরত্ব এবং ভাড়া কত তা লেখা থাকে। সেটা প্রকাশ না করায় বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভাড়ার চার্ট প্রকাশ করলে দেখা যাবে ৬০ ভাগ ভাড়া বাড়ার ফলে নতুন যে ভাড়া হওয়ার কথা সেই ভাড়া আগে থেকেই আদায় করা হচ্ছে। ফলে চার্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না। বাড়তি ভাড়ার ওপর আবার নতুন করে ৬০ ভাগ বেশি নেওয়া হচ্ছে। বাসভাড়ায় এখন চলছে নৈরাজ্য।

তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ দাবি করেন, ভাড়া কেউ বেশি নিচ্ছেন না। দুই-এক জায়গায় হতে পারে। প্রায় পাঁচ বছর পর বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে, যেখানে প্রতি বছর বাড়ানো উচিত ছিল। গাড়ি, যন্ত্রাংশ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। তাই এই ভাড়া বাড়ানোর পরও আমরা লোকসানে আছি। তবে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার বেশি কেউ নিচ্ছে না। কোথাও কোথাও হতে পারে। তবে সেটা খুবই সামান্য। ৯৫ ভাগ ঠিক আছে। আমাদের নির্দেশ হলো সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। সারা দেশে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি কোনো চাঁদাবাজি করা যাবে না।

এদিকে, দীর্ঘ সাধারণ ছুটির পর সাধারণ মানুষের কথা ভেবে এবং করোনার বিস্তার ঠেকাতে সীমিত আকারে চালু করা হয় দেশের গণপরিবহন। এ সময় পরিবহন মালিকদের শারীরিক দূরত্ব রক্ষাসহ অন্যান্য নির্দেশনা মেনে রাস্তায় গণপরিবহন চালানোর কথা বলা হয়। একইভাবে অবহিত করা হয় যাত্রীদেরও। কিন্তু সময় যতো পার হচ্ছে, সেসব স্বাস্থ্যবিধি বা নিরাপদ দূরত্ব মানতে দেখা যাচ্ছে না গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট ও যাত্রীদের কাউকে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্রই।

বেশিরভাগ বাসগুলোতেই শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দৃশ্য চোখে পড়েনি। আবার অনেক বাসে যাত্রী উঠানোর পূর্বে যাত্রীর হাতে দেওয়া হয়নি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও। তবে নগরে কয়েকটি বাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে দেখা গেলেও তার সংখ্যা কম। সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাসেই অতিরিক্ত যাত্রী। বাসগুলোতেই শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে না সেভাবে। আবার বাসে উঠার জন্য বাসের মুখেও ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। এতে করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। এ বিষয়ে কথা হলে গাবতলী লিংক পরিবহনের শ্রমিক মো. আহম্মদ বলেন, আমরা তো সবসময় নিয়ম মেনেই চলতে চাই। কিন্তু যাত্রীরা কথা শোনেন না। তাদের নিষেধ করা হলেও তারা জোর করে বাসে উঠে পড়েন। আবার নামিয়ে দিতে গেলে রাগারাগি ও কটূক্তি করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close