নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০২০

‘প্রতারক’ সাহেদের দেশত্যাগে মানা

* প্রতারণার বিষয়ে মুখ খুলেছেন স্ত্রী* রিজেন্টের দুর্নীতি তদন্ত করবে দুদক* প্রধান সহযোগী গ্রেফতার * ব্যাংক হিসাব জব্দ

কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণা করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পুলিশের পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন বিভাগকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের এআইজি সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে বলা হয়, সাহেদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের টেস্ট করা নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রধান সহযোগী জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক শিবলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত বুধবার রাতে রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অন্যদিকে বিতর্কিত রিজেন্ট হাসপাতালের দুর্নীতি তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করব। এদিন মেডিটেক ইমেজিং লিমিটেডের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সচিব। এ দিন লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। তিনি উপস্থিত না হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছে জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান দুদকে।

তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় সাহেদ প্রতারণায় ছাড় দেননি নিজের পরিবারকেও। আলাপে সাহেদের স্ত্রীর মুখে উঠে আসে তার নানা অপকর্মের চিত্র। সাহেদের বিচারও দাবি করেন স্ত্রী সাদিয়া।

তার বাড়ির মালিকের দাবি, বাড়িভাড়ার টাকা চাইতে গেলেও দেওয়া হতো হুমকি। প্রায় দুই বছর ধরে সাহেদ পরিবারসহ থাকতেন ওল্ড ডিওএইচএসের ৯ নম্বর বাড়িতে। ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাড়িটি ভাড়া নিলেও অল্প কয়েকদিনেই বেরিয়ে আসে তার আসল রূপ। তার প্রতারণার কথা জানতে পেরে বেশ কয়েকবার তাকে নোটিস দেন বাড়ির মালিক। তিনি জানান, টাকা চাইতে গেলেই দেওয়া হতো হুমকি।

সাহেদের স্ত্রী সাদিয়া বলেন, কয়েকবার আমি তার কাছ থেকে চলেও গেছি। আমার পরিবারের কয়েকজনের সঙ্গে তার টাকা পয়সা নিয়ে গন্ডগোল ছিল। ওর জন্য আমার পরিবারের অন্যরাও সমস্যায় আছেন।

দুদক পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দলের সদস্যরা হলেন দুদকের উপ-পরিচালক নুরুল হুদা, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান ও আতাউর রহমান।

র‌্যাবের গোয়ান্দা ইউনিটের প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম জানান, রিজেন্ট হাসপাতালের অনিয়ম ও প্রতারণার ঘটনায় সাহেদের অন্যতম সহযোগী তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক শিবলীকে আমরা আটক করেছি। তার কাছে থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি সাহেদ সম্পর্কে। পাশাপাশি সাহেদের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে পুলিশকে চিঠি দিয়েছি। এর আগে চুক্তি ভঙ্গ করে করোনা রোগীদের থেকে বিল আদায়, টেস্ট না করে ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

নানা অনিয়ম, প্রতারণা, সরকারের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ ও করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগ উঠে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে হাসপাতালটির প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। পরে প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নামে মামলা করা হয়। সাহেদসহ ৯ জন পলাতক রয়েছেন।

এদিকে র‌্যাব জানিয়েছে পলাতক সাহেদকে ধরতে এরই মধ্যে র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থাও কাজ করছে।

গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রিজেন্টের প্রধান কার্যালয়, উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরের দিন উত্তরা পশ্চিম থানায় ১৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়। এতে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা শাখা থেকে আটক আটজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদসহ ৯ জনকে পলাতক আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় তার দেশত্যাগের আশঙ্কা থেকে যায়। তাই তাকে দেশত্যাগ করতে না দিতে ইমিগ্রেশন পুলিশকে অবগত করা হয়েছে।

সব শেষ করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট থাকলে তাও ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিএফআইইউ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে।

চিঠিতে সাহেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে সব হিসাব আগামী ৩০ দিন অবরুদ্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে সাহেদ ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে সব হিসাব আগামী ৩০ দিন অবরুদ্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close