সংসদ প্রতিবেদক

  ১০ জুলাই, ২০২০

বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী

দুর্নীতি মহিরুহ হয়ে গেছে কাউকে ছাড় নয়

অন্যায়কারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা আবার তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুর্নীতি মহিরুহ হয়ে গেছে। এর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কে কোন দলের সেটা বড় কথা নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। করোনাকে জয় করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ ও দলের সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য যেসব কাজ করে যাচ্ছেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো অনেক রাজনৈতিক দল আছে। সমালোচনা অনেকেই করে যাচ্ছেন। এমনকি বহু এনজিও, অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ঠিক বর্তমানে কতজনকে চোখে পড়ে যারা কাজ করছে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে? সেটাই আমার প্রশ্ন।’

সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে সংসদ নেতা বলেন, ‘ঘরে বসে সমালোচনা, বাজেটের খুঁত ধরা, কাজের খুঁত ধরা সেগুলো অনেকেই ধরতে পারেন, এটা ঠিক। কিন্তু মাঠে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করা, এই কাজগুলো কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক যারা, আমরাই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেক মানুষ আছে যারা হয়তো হাত পাততে পারছে না, তাদের কোনো আয় নেই। গোপনে তাদের খাবার সরবরাহ করা হয়। এমনকি ঢাকা শহরে আমাদের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে বিভিন্ন অঞ্চলে আমাদের কমিটিগুলো সাহায্যসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে। আর যারা নিচ্ছে তারা কিন্তু চায় না তাদের নামটা প্রচার হোক। আমরাও চাই না। কারণ এটা তাদের একটু আত্ম অভিমানে লাগে।’

করোনাভাইরাস সংকটে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতোমধ্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবার জন্য আমরা ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি আরো ২ হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া হেলথ টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের ৩ হাজার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা সেগুলোও দেব।’

অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেস্ট করার জন্য খুব ভালো টেকনিক্যাল লোক দরকার হয়। এই লোক পাওয়া কঠিন। কারণ বাড়িতে গিয়ে তারা নমুনা সংগ্রহ করছে, তাদের অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় পাড়ার লোক ঢুকতে দেবে না, বাড়িতে যেতে দেবে না, তারা নমুনা নিতে দেবে না। এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। এমনকি যারা নমুনা সংগ্রহকারী, তারা এক সময় ওই সব পোশাক খুলে ব্যাগে নিয়ে রোগীর বাড়ি ঢোকার মুখে ওগুলো পরে দরজায় নক করেছে এবং তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ তাদের আঘাতও করেছে। তিনি বলেন, এই খবর তো অনেকেই রাখেন না।

আমাদের বিরোধী দল অনেক কথা বলেছে। তারা কিন্তু এই খবরটা কোনো দিন রাখে না। হয়তো আজকেই প্রথম শুনলেন তারা। ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সেখানে খরচ তো হবেই। তবে এটা সত্য যে বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র নষ্ট করে দিয়ে গিয়েছে পঁচাত্তরের পর যারা রাতের অন্ধকারে অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তারাই। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর দল-মত নির্বিশেষে দুর্নীতিবাজদের ধরছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে বিরোধী দল ও বিএনপি এমপিদের বিভিন্ন বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িতদের ধরেই যেন আমরা চোর হয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কে কোন দল সেটা বড় কথা নয়, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের আমরা ধরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসকরা বছরের পর বছর এই দুর্নীতির বীজ বপন করেছে। তা মহিরুহ হয়ে গেছে। যতই কাটেন কোথা থেকে আবার গজিয়ে ওঠে। মানুষের চরিত্রটাই নষ্ট করে দিয়ে গেছে তারা। এই চরিত্রহীনতা একেবারে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছিল। সেখানে আপনি যতই চেষ্টা করেন এর মূলোৎপাটন যথেষ্ট কঠিন।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যতটুকু পারি সেগুলো আমরা শুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এই অনিয়মগুলো আমরা নিশ্চয়ই মানব না। যে যাই হোক তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, নেব এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কথা শুনলেই মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়। এত আতঙ্কিত হব কেন। মরতে তো এক দিন হবেই। তবে নিজে সুরক্ষিত থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধিসহ যা যা মেনে চলার দরকার তা করবেন। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি পাব। আমাদের দেশে করোনা রোগীর সুস্থতার হার অনেক বেশি। বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, করোনার সংক্রমণ জুলাই মাস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে। এরপর আস্তে আস্তে কমে যাবে। সেটাই হচ্ছে। করোনা জয় করার জন্য মনে সাহস রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক বছর ধরে পাটকলগুলোর ২৫ হাজার শ্রমিককে সরকারের পক্ষ থেকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) দিতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে বছরের পর বছর বেতন দিয়ে যেতে হবে। এ পাটকলগুলো সবচেয়ে পুরোনো ৫০ ও ৬০-এর দশকে এগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো আর লাভজনক করা সম্ভব না। বিশ্বে পাটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আমরা পাটের জিন আবিষ্কার করেছি। শ্রমিকদের পাওনা ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমরা পরিশোধ করব। সব টাকা তাদের হাতে দেওয়া হবে না। দিলে খরচ হয়ে যাবে। অর্ধেক টাকা আমরা তাদের পারিবারিক সঞ্চয়পত্র করে দেব। এতে তারা প্রতিদিনের মজুরির চেয়ে বেশি পাবে। এ পাটকলগুলো আধুনিক করে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এদের যারা আগ্রহী হবে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close