নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ জুলাই, ২০২০

সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে

দেশে প্রথম করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তের চার মাস পূর্ণ হলো গতকাল। প্রথমদিকে সংক্রমণ বিস্তারের গতি ধীর থাকলেও যত দিন যাচ্ছে, তা তত তীব্র হচ্ছে। প্রথম তিন মাসের তুলনায় চতুর্থ মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। আর আক্রান্তের ৫৯ শতাংশের বেশি শনাক্ত হয়েছে চতুর্থ মাসে। মৃত্যুর প্রায় ৫৭ শতাংশও ছিল এই মাসে।

সবশেষ গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, দেশে আরো ৪৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২ হাজার ১৯৭ জনে। এছাড়া আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৮৯ জন। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এপ্রিল পর্যন্ত কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং (রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ) মোটামুটি ভালোই করেছিল, কিন্তু মে থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি প্রায় বন্ধ আছে। নমুনা পরীক্ষার কাজে একটি-দুটি করে ল্যাবরেটরি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহও বাড়ছিল। কিন্তু চার মাসের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা দুই কমেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দিন ধরে নমুনা পরীক্ষা কমার পাশাপাশি দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমতির দিকে। এই পরিস্থিতিতে শিগগির দেশে সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আক্রান্তের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অভিজ্ঞতা, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সংক্রমণচিত্র থেকে তারা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনগুলোতে সংক্রমণ আরো বাড়বে। বিশেষ করে পবিত্র কোরবানির ঈদের পর সংক্রমণে বড় লাফ দেখা যেতে পারে। এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়, এখনো সংক্রমণ কমার দিকে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া দেশে পাঁচ দিন ধরে পরীক্ষা কমে গেছে। ফলে রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। কিন্তু রোগী শনাক্তের হার কমেনি।

আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে পরীক্ষা কম হচ্ছে বলে রোগীর সংখ্যা কম হচ্ছে। কিন্তু শনাক্তের হার কমেনি। শিগগির সংক্রমণ কমবে তথ্য-উপাত্ত এমনটা বলছে না। বরং বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, এটি আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে। এলাকাভিত্তিক লকডাউন (অবরুদ্ধ) কার্যকর করার ক্ষেত্রে গতি নেই। সামনে পবিত্র কোরবানির ঈদ। এ সময় হাট বসবে, হাটে এবং শহর থেকে গ্রামে মানুষের যাতায়াত বাড়বে। এসব ঠেকানো না গেলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে।

৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্তের কথা জানানো হয়। গত মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যায় ফ্রান্সকে পেছনে ফেলে বিশ্বে ১৭তম অবস্থানে আসে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে নতুন করে ১৫ হাজার ৮৮৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৫ হাজার ৬৭২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে দেশে নমুনা পরীক্ষা করা হলো ৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৫২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৯ জনের মধ্যে। ফলে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৪৬ জন। এ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ১৯৭ জনের। তাদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৪১ জন ও নারী ৪৫৬ জন। শতাংশের হিসেবে পুরুষ ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নারী ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বয়স ও বিভাগ অনুযায়ী মৃত্যু : মৃত ৪৬ জনের মধ্যে ২০ বছরের বেশি বয়সি দুজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুই, চল্লিশোর্ধ্ব এক, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১৫, ষাটোর্ধ্ব ১৬, সত্তরোর্ধ্ব ছয়, ৮০ বছরের বেশি বয়সি তিন এবং ৯০ বছরের বেশি বয়সি একজন রয়েছেন।

মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪, রাজশাহী বিভাগের তিন, খুলনা বিভাগের ৯, রংপুর বিভাগের এক, সিলেট বিভাগের চার এবং বরিশাল বিভাগের তিনজন রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন মারা গেছেন হাসপাতালে বাকি ৮ জন বাসায়।

করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৫ দশমিক ৯৯, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ১, খুলনায় ৪ দশমিক ৮২, বরিশালে ৩ দশমিক ৬৯, সিলেটে ৪ দশমিক ৩২, রংপুরে ৩ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছেন।

২৪ ঘণ্টায় সুস্থ : সুস্থ হয়েছেন আরো ২ হাজার ৭৩৬ জন। এতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০ হাজার ৮৩৮ জনে। যে ৪৬ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ জন এবং নারী ৮ জন। শতাংশের হিসেবে পুরুষ ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং নারী ২০ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

শনাক্ত, সুস্থতা ও মৃত্যুর হার : বুলেটিনে বলা হয়, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। সব মিলিয়ে, নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এখন পর্যন্ত রোগী শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৭ দশমিক ৯৬ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইনের তথ্য : আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ৭৯২ জনকে। এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে ৩৩ হাজার ১৪৩ জনকে। আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০৯ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ১৬ হাজার ২৮৭ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১৬ হাজার ৮৫৬ জন।

হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৯১ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২৯৯ জনকে। কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ হাজার ১৩৪ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ২১ হাজার ৩০১ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৬২ হাজার ৯৯৮ জন।

করোনার ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে সবাইকে অনুরোধ করেন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আপনার সুরক্ষা আপনার হাতে। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন, সাবান-পানি দিয়ে বারবার হাত ধোয়ার নিয়ম মানুন। নিয়মিত ব্যায়াম, ভালো সিনেমা দেখে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close