সংসদ প্রতিবেদক

  ০৯ জুলাই, ২০২০

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

পাপলু কুয়েতের নাগরিক হলে আসন শূন্য হবে

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপলু সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে থাকলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাপলু কুয়েতের নাগরিক কি না; সে বিষয়ে কুয়েতের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। যদি এটা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার ওই আসন শূন্য হবে। কারণ যেটা আইনে আছে, সেটা হবে। তার বিরুদ্ধে আমরা এখানেও তদন্ত করছি। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপি-দলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিরোধী দলের অভিযোগের জবাব দিলেন স্বয়ং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে শুরুর অধিবেশনে তিনি মানব পাচারের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথাও উল্লেখ করেন।

রাজধানীর রিজেন্ট হাসপাতাল নিয়ে সংসদে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেই ধরেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অনিয়মগুলো খুঁজে বের করেছি। ইতোমধ্যে জড়িতদের

গ্রেফতারও করা হয়েছে। রিজেন্ট হাসপাতালের এই তথ্য কিন্তু আগে কেউ দেয়নি, জানাতে পারেনি। আমরাই খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিয়েছি। র‌্যাব সেখানে গেছে। সেখান থেকে জড়িতদের খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া সংসদ সদস্য পাপলু সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে সংসদ সদস্যের কথা বলা হয়েছে, সে কিন্তু স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য। সে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নমিনেশন চেয়েছিল, আমি কিন্তু দিইনি। গত নির্বাচনে ওই আসনটি জাতীয় পার্টিকে দিয়েছিলাম। জাতীয় পার্টির নোমান (প্রার্থী) নমিনেশন পেয়েও নির্বাচন করেননি। এ কারণে পাপলু জিতে আসে। কাজেই তাকে আমরা এমপি বানাইনি। কাজেই সে যদি কুয়েতের

করোনাকালে ত্রাণসহায়তার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সারা দেশে ৫০ লাখ পরিবারকে আমরা সহায়তা দিচ্ছি। তাদের তালিকা বানানো হয়েছে। সেই তালিকা তিন দফা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের আইডি কার্ড ভোটার লিস্টে নাম সবকিছু মিলিয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু যাচাই করে সঠিক ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌঁছে দিচ্ছি। এ প্রক্রিয়ায় আমাদের সময়ও লেগেছে। অন্য যে নামধাম (ভুয়া/অযোগ্য) এসেছে, তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

সরকার-দলীয় বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন বাংলাদেশি কর্মীরা যাতে করোনা-পরবর্তী সময়ে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন; সেজন্য দূতাবাসের মাধ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে আমরা দুস্থ ও কর্মহীনদের প্রায় ১১ কোটি টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী দিয়েছি। এ ছাড়া বিদেশফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছি। করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রবাসে করোনায় মৃত কর্মীর পরিবারের সদস্যকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য আমরা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছি। এ-সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের সংকট নিরসনে সরকার বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শ্রমিক ও অভিবাসীদের অধিকার সুনিশ্চিত করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তাদের খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত ও অন্তত ছয় মাস চাকরিচ্যুত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ করেছি। অন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীকেও এগিয়ে আসার অনুরোধ করা হয়েছে।

সরকারি দলের সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে কর্মহীন (১২ জুন পর্যন্ত) ১৪ হাজার ৯৫৭ জন প্রবাসী শ্রমিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অধিকাংশ প্রবাসী শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এসেছেন।

সরকারি দলের আরেক সদস্য আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার প্রভাবে সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে এর প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে অনেক প্রতিরোধ-প্রতিকারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দ্রুততম সময়ে সঠিক কৌশল অনুসরণ করায় এ পর্যন্ত দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা বিস্তাররোধে লকডাউন কার্যকর কৌশল হলেও এই পরিস্থিতি দীর্ঘকাল অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ দৈনিক মজুরির ওপর নির্ভরশীল। তাই ক্ষয়ক্ষতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এ দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সমন্বিত জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হন চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’সহ বঙ্গবন্ধুর লেখা নিয়ে প্রকাশিত বইগুলোর তথ্য তুলে ধরেন। ওই বইয়ের তথ্যগুলো কীভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছিলেন সেটা বলেন। বঙ্গবন্ধুর লেখা বা তার সংশ্লিষ্ট দেশে-বিদেশের ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে তা প্রকাশের পরিকল্পনার কথাও এ সময় তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ প্রসঙ্গে তিনি স্মৃতিকথা নিয়ে নতুন বই প্রকাশের প্রসঙ্গও টানেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’ একটা লেখা আছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র মতোই উনার জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে কিছু লেখা। সেই লেখাগুলো আমি প্রস্তুত করেছি। তা প্রায় তৈরি হয়ে আছে। ওটা আমরা ছাপতে দেব।

প্রধানমন্ত্রী জানান, কারাগারের রোজনামচা মূলত ১৯৬৬ সাল থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত। ৭১ সাল থেকে আমরা উনার কোনো লেখা পাইনি। কারণ একাত্তর সালে উনি কারাগারে (পাকিস্তানে)। সেখানে কীভাবে ছিলেন, কী অবস্থায় ছিলেন, তা আমরা জানি না। সামান্য একটা লাইন পাওয়া গেছে আইয়ুব খানের ডায়েরিতে, অক্সফোর্ড থেকে প্রকাশিত এটা। সেখানে উনার সম্পর্কে কিছু কমেন্ট করা আছে। বঙ্গবন্ধুকে যখন কোর্টে নিয়ে আসা হতো, উনি আসতেন, দাঁড়াতেন, বসতে বললে বসতেন। উনি এসে দাঁড়িয়েই নাকি ‘জয় বাংলাদেশ’ বলতেন। বলতেন ‘আমাকে যা খুশি তাই করো। আমার যেটা করার আমি তা করে ফেলেছি। আমার বাংলাদেশ তো স্বাধীন হবেই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close