নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জুন, ২০২০

করোনা রুখতে একযোগে কাজ করবে বিমসটেক

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। গতকাল শনিবার সাত দেশের এই জোটের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে নেতাদের এমন ঐক্যের আহ্বান আসে। বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বাণীতে একসঙ্গে কাজ করা এবং এই অঞ্চলের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবার বিমসটেকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না বলে ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় জানিয়েছে। বাণীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বের সামনে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে বড় রকমের ধাক্কা দিয়ে এটা এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নানামুখী প্রভাব রেখে যাবে।

কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলায় দারুন প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করতে পারে বিমসটেক। মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই প্ল্যাটফরমকে কাজে লাগাতে কোনো প্রচেষ্টাই আমাদের বাদ রাখা উচিত হবে না।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি, জ্বালানি সহযোগিতা জোরদার, যোগাযোগ বৃদ্ধি, জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জনস্বাস্থ্য, সন্ত্রাসবাদ-চরমপন্থা মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা এবং দারিদ্র্যবিমোচনসহ সহযোগিতার প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমসটেকের সব সদস্য দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্ব তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, কোনো দেশ এককভাবে এর (কোভিড-১৯) এত বড় ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে ভারত তার বিশেষায়িত জ্ঞান, সম্পদ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিনিময় করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর বৈশ্বিক জিডিপিতে অবদান কম থাকার বিষয়টি তুলে ধরে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। বাণীতে তিনি বলেন, বিমসটেক সদস্য দেশগুলোতে বিশ্বের জনসংখ্যার ২২ শতাংশের বসবাস হলেও বৈশ্বিক জিডিপিতে এর অবদান মাত্র ৪ শতাংশ। আমি বিশ্বাস করি, এই সংগঠন সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাণিজ্য, প্রযুক্তি বিনিময় এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিমসটেক আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সদস্য দেশগুলোর সক্ষমতা পরীক্ষার পাশাপাশি অসহায়তার দিকগুলোও প্রকাশ করেছে। কঠিন এই সময় আমাদের শক্তির দিকগুলোকে এক জায়গায় করে এই অঞ্চলের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করার দাবি রাখে। এই অদৃশ্য শত্রুর সামনে আমরা ক্রমে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছি। এখনই সময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমন্বিতভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলার। আমরা অবশ্যই সমন্বিতভাবে লড়ব এবং এই শত্রুকে পরাস্ত করব।

মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বন্ধুত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ত্বরান্বি^ত করতে এবং কোভিড-১৯ এর মতো যেকোনো ধরনের নতুন ও উদ্ভূত সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করতে পারব। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোও করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য, ভ্রমণ ও যোগাযোগের অন্যান্য দিকগুলো বন্ধ করে দেয়।

এ প্রসঙ্গে বিমসটেক মহাসচিব শহীদুল ইসলাম বলেন, আশার দিক হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সরবরাহ ব্যবস্থা আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সদস্য দেশগুলো ক্রমান্বয়ে বাণিজ্য ও পরিবহন চলাচল উন্মুক্ত করছে। বিমসটেক নেতারা ভবিষ্যৎ মহামারি বা অন্যান্য দুর্যোগে পরিবহন যোগাযোগ যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপ করেন; বিশেষত সমুদ্র, নৌপথ ও রেল যোগাযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি, দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অর্জন ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়ছে।

শহীদুল হক বলেন, এ বছরের শেষদিকে কলম্বোয় অনুষ্ঠেয় পঞ্চম বিমসটেক সম্মেলনে নেতারা মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে আরো বিনিয়োগের স্পষ্ট নির্দেশনা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন বা বিমসটেকের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে কেবল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এর সদস্য হলেও পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান বিমসটেকে যোগ দেয়।

ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়াকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছে বিমসটেক; কাজ করছে সার্ক ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতার একটি সেতুবন্ধ হিসেবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close