নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ জুন, ২০২০

লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানার সব চেষ্টাই ব্যর্থ

ঘাটে-ঘাটে উপচেপড়া ভিড় সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ

স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ কিংবা যাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব রক্ষার কোনো চেষ্টাই কাজে আসছে না দেশের কোনো লঞ্চঘাটে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু হওয়ায় ফেরিতে সাধারণ যাত্রীদের ভিড় কমেছে। তবে কোনো নৌপরিবহনেই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে চলতে দেখা যায়নি। গতকাল সোমবার সকালের ভাগে কর্তৃপক্ষ সব নিয়ম মেনে লঞ্চ ছাড়ার চেষ্টা করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকায় কোনো নিয়মই আর কার্যকর থাকেনি দেশের কোনো লঞ্চঘাটে।

দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে গতকালও ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সকাল থেকে লঞ্চ, ফেরি, বাস ও স্পিডবোট শতশত যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসে।

গণপরিবহন চালু হওয়ায় বাসে করে যাত্রীরা ঢাকা অভিমুখে যাচ্ছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু হওয়ায় ফেরিতে সাধারণ যাত্রীদের ভিড় কমেছে। তবে কোনো নৌপরিবহনেই শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে চলতে দেখা যায়নি। এ নৌরুটে সকাল থেকে ১৪টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও প্রায় ৪০০ স্পিডবোট চলছে।

ঢাকা-শিমুলিয়া রুটে যাত্রীবাহী বাস চলে কমপক্ষে ২০০। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে যাত্রা করতে পেরে অনেক যাত্রী সন্তুষ্ট। তবে অনেক যাত্রী বলছেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা হচ্ছে না। লঞ্চে বেশ ভিড়। লঞ্চ থেকে নামার সময় যাত্রীরা গাদাগাদি করে ঘাটে নামছেন। আবার, স্পিডবোটে আসন বিন্যাসের কারণে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা মোটেও সম্ভব নয়। প্রতি স্পিডবোটে ২০ থেকে ৩০ যাত্রী নেওয়া হয়। স্পিডবোট ইজারাদার প্রতিনিধি মো. মামুন পাঠান বলেন, প্রতি বোটে যাত্রী উঠানোর আগে জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়।

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. হিলাল উদ্দিন বলেন, দক্ষিণবঙ্গমুখী পণ্যবাহী ২৬৬টি ট্রাকসহ মোট ১ হাজার ৩৬০টি যান গেছে এবং ঢাকামুখী ২৬৬টি পণ্যবাহী ট্রাকসহ মোট ২ হাজার ১৩৮টি যান পার হয়েছে। আর ফেরির ট্রিপ হয়েছে ৬৭টি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে চলা লকডাউন উঠার পর রোববার থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি যানবাহন চলাচালের অনুমতি দেয় সরকার। কিন্তু শর্ত ছিল, কোনো বাহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না, মেনে চলতে হবে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম।

চাঁদপুর থেকে লঞ্চ চলাচল শুরুর পর রোববার ঘাটে অনেক যাত্রীর মধ্যে সেসব নিয়ম মেনে চলতে অনিহা দেখা যায়। ঘাটে অব্যবস্থাপনার দায়ে বিআইডব্লিউটিএর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাককে সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। সে কারণে সোমবার সকাল থেকেই কর্তৃপক্ষ ঠিকঠাক নিয়ম অনুসরণ করে যাত্রী তোলার চেষ্টা করছিল। তাতে দিনের শুরুতে ঘাটে যাত্রীদের লাইন প্রায় আধা কিলোমটার ছাড়িয়ে যায়। তবে তখনো তাদের দূরত্বের নিয়ম মানতে দেখা গিয়েছিল। যাত্রীরা লঞ্চে ঢোকার সময় জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছিল। লঞ্চে বসার ক্ষেত্রেও দূরত্ব রাখার চেষ্টা দেখা যাচ্ছিল। ওই পরিস্থিতির মধ্যে সকাল ৬টায় এমভি রফ রফ-২, সকাল ৭টায় এমভি সোনার তরী ও সকাল ৮টায় এমভি ঈগল-৭ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

চাঁদপুরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা হিসেবে রোববার বিকালে যোগ দেওয়া আবুল বাশার মজুমজার তখন বলেন, আমরা ঘাটে যাত্রীদের নিরাপত্তায় ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি লঞ্চে জীবাণুনাশক স্প্রে প্রদান করা হচ্ছে। যাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। এক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু এরপর যাত্রী বাড়তে থাকলে সব ভেঙে পড়ে। ঘাটের টিকিট কাউন্টারে শত শত মানুষকে গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বেলা ১১টায় এমভি রফ রফ-৭ লঞ্চে দেখা যায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঠেলে, ধাক্কা দিয়ে যে যেভাবে পারেন লঞ্চে উঠার চেষ্টায় ব্যস্ত।

সকালে যাত্রী উঠার সময় জীবাণুনাশক স্প্রে করার যে দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, পরে যাত্রীদের হুড়োহুড়ির মধ্যে সেই চেষ্টাও আর দেখা যায়নি। যাত্রীদের বেশির ভাগের সঙ্গে মাস্ক থাকলেও অনেকেই তা খুলে বা মুখ থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন।

হান্নান নামের এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় যেতে হবে। ঘাটে প্রচুর ভিড়। এই ঝুঁকির মধ্যেই যাত্রীরা লঞ্চে উঠছে। কোনোভাবেই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন কর্মকর্তা আবুল বাশার মজুমদার বলেন, লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দূরত্ব বজায় না রেখে লঞ্চে উঠছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ঘাটে প্রচুর যাত্রী থাকায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও গতকাল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে ৭৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে ও ভিড়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে ১০ নম্বর পল্টুনে উপচেপড়া ভিড় হওয়ায় সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। এখান থেকে হাতিয়া ও বেতুয়ার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে।

দুপুরে সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায় বিকালের লঞ্চ ধরতে মানুষ দলে দলে টার্মিনালের দিকে হেঁটে চলেছে। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক করোনা আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কোনো বিধিই মানা হচ্ছে না। বেশির ভাগেরই মাস্ক থাকলেও সেটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। প্রয়োজনের তুলনায় লঞ্চ কম হওয়ায় ভিড় বেশি বলেও বলছেন তারা।

এদিকে ১০ নম্বর পল্টুনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার সুযোগ নেই উল্লেখ করে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটের যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন বলেন, শুধু ১০ নম্বর পল্টুনে যাত্রীদের ভিড় আছে। এখান থেকে হাতিয়া-বেতুয়ার লঞ্চ ছাড়ে। এই দুটো লঞ্চ ৫টা ও সাড়ে ৫টায় ছাড়ার কথা। যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। বাকি পল্টুনগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়েও কম যাত্রী আছে। এই লাইনে যে কয়টি লঞ্চ ছাড়ার কথা তার মধ্যে মাত্র একটি যাবে। ফলে উপচে পড়া ভিড় ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বাকি ঘাটগুলোয় সমস্যা নেই। ভোর ৭টা থেকে এ পযন্ত ৪৮টি লঞ্চ এসেছে। ছেড়ে গেছে ২৭টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close