বদরুল আলম মজুমদার

  ৩১ মে, ২০২০

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ছুটি শেষ হলেও করোনা রোধে সতর্কতা জরুরি

যত দুর্যোগই আসুক ঘরে বসে থাকার উপায় নেই; এমন চিন্তা থেকে সরকার ধীরে ধীরে দেশের সব অর্থনৈতিক কর্মকা- সচল করে দিচ্ছে। আগামী ১ জুন থেকে গণপরিবহনসহ সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেসরকারি সেক্টরের কর্মকান্ড ঈদের পর দিন থেকেই শুরু হয়েছে। ঈদের আগে গ্রামের বাড়িতে যেসব লোকজন ঈদ করতে বাড়িতে গেছেন তারা দলে দলে ফিরছেন রাজধানীতে। এ অবস্থায় করোনা মহামারি থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত সুরক্ষার পাশাপাশি অধিক সতর্কতাও জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। ঘরের বাইরে মাক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক করাসহ সামাজিক দূরত্ব মানার ওপর জোর দিতে হবে অধিক হাবে। বিশেষ করে দেশব্যাপী গণপরিবহন চালু করতে হলে কীভাবে সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হবে তা নিয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা নেই।

ছুটি শেষে সব কিছু ‘ওপেন’ করে দেওয়াতে করোনা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থার সর্বশেষ কী হতে পারে তা নিয়ে বিশেজ্ঞরা অনেকটাই সন্দিহান। পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাওয়ার কথা বলছেন তারা। দেশে লকডাউন অবস্থা জারির পরও সেটা মানার ব্যাপারে লোকজন অনেকটাই উদাসীন ছিল। ফলে সক্রমণের তিন মাসের মাথায় এসে সেটি পিক টাইমে পৌঁছেছে। যা আগামী এক মাসে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ঠিক এই সময়ে লকডাউন অবস্থা পুরোপুরি তুলে নিয়ে এ রোগ বা ভাইরাস মোকাবিলায় একটা বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হবে দেশবাশীকে। এ অবস্থায় ব্যক্তি সুরক্ষার ওপর নির্ভর করেই সামনে যেতে হবে দেশের মানুষকে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন বলেন, যেকোনো সিদ্ধান্তের বেলায় জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করলে বলতে হবে, এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে সংক্রমণ আরো বাড়বে। সংক্রমণের মাত্রা কোন পর্যায়ে পৌঁছাবে তা এখনই বলা যাবে না। কার্যকর লকডাউন ও সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আলোকে সংক্রমণ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি ধারণা করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশে এ পর্যন্ত কার্যকর লকডাউন হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্যবিধি ও সামজিক দূরত্বও শতভাগ মেনে চলা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময়ে হাজার হাজার মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন সংক্রমিত অঞ্চল থেকে গ্রামে আসা-যাওয়া করেছেন। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতি বাড়বেÑ এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়।

যদিও বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, বাস্তবতার কারণে জীবন-জীবিকার সমন্বয় করেই চলতে হবে। দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর ২৬ মার্চ প্রথম ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে সেই ছুটি বাড়ানো হয়। ছুটি আর না বাড়ানোর সরকারি ঘোষণার পর হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। সর্বোচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে মানুষের উপচেপড়া ভিড় নিয়ে আতঙ্ক বাড়ছে। অফিস-আদালত পুরোদমে চালুর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত নয়। এতে করে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো নাজুক হবে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে। দক্ষিণ এশিয়া অন্য দেশ বিশেষ করে ভারতে নতুন করে আরো ১৫ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে তা ১৫ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পাকিস্তানেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে মানুষ চলাচলে।

এ অবস্থায় দেশের সব কিছু খুলে দেওয়ার পেছনে মানুষের জীবন-জীবিকাকে বড় করে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে মাসের পর মাস সবকিছু বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। জীবিকার প্রয়োজনে সরকারের কাছে আর বিকল্প কোনো পথ নেই। তাই বাধ্য হয়েই সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনাকে সঙ্গে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদদের অনেকে।

এপ্রিল মাসে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনার সময় লকডাউন ছিল। ওই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়কে পিকটাইম হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ এই সময়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হবে। এরপর ধাপে ধাপে তা কমতে শুরু করবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই পর্যালোচনা আর বিবেচনায় নেওয়া যাবে না। সবকিছু খুলে দেওয়ার পর বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব হবে না। সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন মাত্রায় পৌঁছাবে এবং কবে নাগাদ স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা ফিরতে পারব, তা অনিশ্চিত হয়ে গেল।

এদিকে করোনা প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লাহ বলেন, অফিস-আদালত খুলে দেওয়াসহ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কমিটির সদস্যরা গতকাল বৈঠক করেছে। বৈঠকে একটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছি, তা হলো- অফিস খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণ বাড়বে এবং সেটি চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

এ অবস্থায় যখন সবকিছু খুলে দেওয়া হলো, তাহলে জনসমাগম হয় এসব স্থানের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা জরুরি। বিশেষ করে কাঁচাবাজার, অফিস-আদালত, গণপরিবহন কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে, সে সম্পর্কিত নির্দেশনা দিতে হবে। মানুষকে আরো সচেতন করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close