নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ এপ্রিল, ২০২০

দুর্ভোগে সুযোগ খুঁজলে কাউকে ছাড় নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এপ্রিলে করোনার প্রকোপ আরো বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ সময় মানুষের দুর্ভোগে কেউ নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজলে কোনো ছাড় নয়। আর যারা শুরু থেকেই জীবনবাজি রেখে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও যারা সেবা দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন তারা ভবিষ্যতে কীভাবে মানুষের সেবা দেন তাও পর্যবেক্ষণ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রভাব মোকাবিলায় জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ে দরিদ্র অসহায় ও বেকারদের তালিকা তৈরি করে তাদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, যাদের আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি তার বাইরে যারা আছে, যারা হাত পাততে পারবেন না তাদের তালিকা করে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। এই কাজটা আপনারা করবেন।

যেসব চিকিৎসক প্রত্যক্ষভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসেননি তাদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা চাকরি করতে পাবেন কিনা, তা ভাবা হবে। আর যারা জীবনবাজি রেখে কাজ করছেন তারা যদি করোনায় আক্রান্ত হন তাহলে তার বা তাদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব সরকার নেবে। করোনায় চিকিৎসাসেবা দানকারীদের ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা স্বাস্থ্য বিমা দেওয়া হবে। চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কেউ আক্রান্ত হলে দ্বিগুণ এবং কেউ মারা গেলে তার পরিবার ৫ গুণ অর্থ সহায়তা পাবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণে যুক্ত অন্য কর্মচারীদের জন্যও বিশেষ স্বাস্থ্য বিমা চালু করা হবে।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি, তাদের তো দিচ্ছিই, কিন্তু এর বাইরের যে শ্রেণিটা, যারা হাত পাততেও পারছে না, তাদের তালিকা করে, তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, এই কাজটা আপনারা করবেন।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এটা তাদের জন্যই করব যারা এই করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কাজ করেছেন। অর্থাৎ জানুয়ারি মাস থেকে শুরু। মূলত মার্চ মাস থেকে এটা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। এই সময় যারা কাজ করেন নাই, যারা নিজেদের সুরক্ষা করার জন্য পালিয়েছেন, তাদের জন্য এই প্রণোদনা নয়। তারা এটা পাবেন না।

শেখ হাসিনা বলেন, একজন রোগী এলে তার চিকিৎসা করতে হবে। তার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করা যায়। অ্যাপ্রোন পড়ে নেন, মুখে মাস্ক লাগান, হাতে গ্লাভস দেন, অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন, হাত ধোন, রোগী দেখেন। রোগী কেন ফেরত যাবেন? আর একজন রোগী দৌড়াদৌড়ি করেন, ঘুরে ঘুরে সেই রোগী কেন মারা যাবেন?

এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একজন ছাত্রের কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে বাড়িতে মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ টানেন। ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতক শেষ বর্ষে (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) পড়ুয়া সুমন চাকমা নামের ওই শিক্ষার্থী ছিলেন ক্যানসারের রোগী। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা মেডিকেল, মুগদা হাসপাতাল এবং আইইডিসিআরে গিয়ে কোনো চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পরে সোমবার সকালে খাগড়াছড়ির ইটছড়িতে নিজের বাড়িতে মারা যান সুমন চাকমা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাবির একজন ছাত্র কেন মারা যাবেন? এই রোগী যখন যেখানে যেখানে গেছেন, সেখানে কোন কোন ডাক্তারের দায়িত্ব ছিল, আমি তাদের নামটাও জানতে চাই। তাদের ডাক্তারি করবার মতো বা চাকরি করবার মতো সক্ষমতা নেই। তাদের বের করে দেওয়া উচিত চাকরি থেকে, এটা আমি মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close