গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৭ এপ্রিল, ২০২০

ব্যাংকে উপচে পড়া ভিড়

সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না ঝুঁকিতে ব্যাংক কর্মকর্তারা

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়লেও টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। মাসের শুরুর দিক হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকের শাখায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া লকডাউনের আশঙ্কা ও আতঙ্ক থেকেও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে ব্যাপকহারে। ফলে সাধারণ ছুটির মধ্যেও সীমিত আকারের ব্যাংকিং লেনদেনে গ্রাহকদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এতে সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকছে না। ফলে করোনাভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। তারা বলেন, কম সময়ের লেনদেনে গ্রাহকদের এত চাপ যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যাচ্ছে না। এতে ব্যাংকারদের পাশাপাশি যারা ব্যাংকে আসছেন, সবাই ঝুঁকিতে রয়েছেন। এজন্য সবার নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

দেশে প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে দুই দফায় তা বাড়িয়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ২০ দিনের সাধারণ ছুটির আওতায় চলছে সারা দেশ। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য মাঠে নেমেছে বেসামরিক প্রশাসনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী। তবে জরুরি সেবার আওতায় সীমিত পরিসরে ব্যাংকিংসেবা চালু রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যেও ব্যাংকে গ্রাহকের ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রোববার থেকে ব্যাংকগুলোতে লেনদেন হচ্ছে তিন ঘণ্টা। এ সময়ের বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা তুলতে আসছেন। বিশেষ করে মাসের প্রথম দিক হওয়ায় বেতন, সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন ও মুনাফা উত্তোলন এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী-ভাতা তোলার চাপ অনেক বেড়ে গেছে। গতকাল সোমবারও ব্যাংকে গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতে গ্রাহকদের চাপ এতটাই বেশি ছিল যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, উল্টো গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াতে দেখা যায় গ্রাহকদের। এতে করোনা-ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোনালী ব্যাংকের নবাবগঞ্জের আগলা শাখার অফিসার রকিবুল ইসলাম রঞ্জু বলেন, সাধারণ ছুটির মধ্যেও আমাদের শাখায় গ্রাহকদের ব্যাপক চাপ। বেশির ভাগই নগদ টাকা তুলছেন। রেমিট্যান্সে টাকাও তুলতে আসেন অনেকেই। কেউ কেউ এসেছেন ডিপিএসের টাকা জমা দিতে। গ্রাহকের এতটাই চাপ ছিল, লাইনে এক ইঞ্চি ফাঁকাও ছিল না। আমরা তাদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেয়েছি। তিনি আরো বলেন, ঈদের সময় ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়। সেভাবে এখনো ব্যাংক বন্ধ রাখা যায়। ব্যাংক কর্মকর্তা ও গ্রাহকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করা উচিত।

বেসরকারি আল-আরাফা ব্যাংকের চকবাজার শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, আমাদের শাখায় তুলনামূলক গ্রাহকদের চাপ একটু কম ছিল। তবে এর মানে এই নয় যে আমরা ঝুঁকিতে নেই ?। প্রতিদিনও যদি ২০ জন গ্রাহক ও আসেন, তাহলে তারা তো বৃষ্টি পরিবার থেকে আসছেন। তারা আমাদের চেক বই দিচ্ছেন, আমরা তাদের টাকা দিচ্ছি। আর করোনা তো এভাবেই ছড়ায়। ফলে আমরা নিজেদের ঝুঁকিগ্রস্ত মনে করছি। ব্যাংক বন্ধ রাখলে অন্তত নিরাপদে বাসায় থাকতে পারতাম। ব্যাংক খোলা রাখা নিয়ে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাংক কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন।

গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে সারওয়ার মোর্শেদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা লেখেনÑ ব্যাংকারদের যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা না করে বাংলাদেশ ব্যাংক কীভাবে ব্যাংক খোলা রাখতে বলে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সুবল ঘোষ নামে আরেক ব্যাংক কর্মকর্তা লিখেছেন, নিজের জন্য ভাবছি না, ভাবছি পরিবার বন্ধু-বান্ধব, ভাবছি স্যার আপনার (গ্রাহক) জন্য।

গ্রাহকদের ব্যাংকে উপস্থিতির কিছু স্থিরচিত্র আপলোড করে জনতা ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম নামে একজন শাখা ব্যবস্থাপক লিখেছেন, সীমিত ব্যাংকিংয়ের নমুনা, কী লিখব বুঝতে পারছি না। এভাবে কি করোনা প্রতিরোধ সম্ভব, জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন?

রাসেল চৌধুরী নামে আরেকজন লিখেছেন, চলুক সার্কাস-মরলে একা মরব কেন সবাই একসাথে মরব, সঙ্গে ব্যাংকার এবং সবার পরিবার ও আশপাশের লোকজনের ফ্রি করোনা সরিয়ে দেওয়া তো আছেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close