আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ৩০ মার্চ, ২০২০

করোনায় মারা গেলেন স্পেনের রাজকুমারী

বিশ্বে মৃত্যু ৩২ হাজার আক্রান্ত ৭ লাখ

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্পেনের রাজকুমারী মারিয়া তেরেসা। এতে রাজপরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এই প্রথম কোনো রাজপরিবারের সদস্যের প্রাণ গেল। তবে করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ের। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি তার সুস্থতার খবর নিশ্চিত করেছে। গত কয়েক মাসে স্পেনে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন পর্যন্ত ৭৩ হাজার ২৩৫ জন মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫ হাজার ৯৮২ জন। এক রাতের মধ্যেই ৮৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এদিকে মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৫, মারা গেছেন ৩১ হাজার ৭৩৭ এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৯ জন। আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার ওপরের স্থানটি যুক্তরাষ্ট্রের। এক ইতালিতেই ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। স্পেনে সেই সংখ্যাটা পাঁচ হাজারের বেশি।

ফেসবুকে রাজকুমারী মারিয়া তেরেসার মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন তার ভাই প্রিন্স সিক্সতো এনরিকে ডি বারবন, ডিউক অব আরানজুয়েজ। তিনি জানান, মারিয়া তেরেসার শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর গত শুক্রবার প্যারিসে তার মৃত্যু হয়েছে। ওইদিনই মাদ্রিদে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

প্রিন্স হাভিয়ার ও ম্যাডেলিন ডি বারবনের ছয় সন্তানের অন্যতম মারিয়া তেরেসা ১৯৩৩ সালের ২৮ জুলাই প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন।

ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লসও সম্প্রতি নভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। স্ত্রী ক্যামিলাকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকেও রাখা হয়েছে সতর্ক অবস্থায়।

করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হলেন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি : গত ১২ মার্চ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর অফিস থেকে জানানো হয়, সোফি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। লন্ডন থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এ ঘটনার পর থেকেই ট্রুডো ও তার পরিবার সেলফ আইসোলেশনে ছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার তিন সন্তানের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে সোফি বলেন, ‘আমি এখন খুব ভালো অনুভব করছি।’ যারা খোঁজখবর নিয়েছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি। সোফি জানান, নিজের ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি ভাইরাসমুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।

নিজ বাড়িতে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর সব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন ট্রুডো। স্ত্রী সুস্থ হওয়ার পরও কানাডাবাসীর সামনে উদাহরণ তৈরির জন্য বাড়ি থেকেই কাজ অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্পেনে এক রাতের মধ্যেই ৮৩৮ মৃত্যু

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে স্পেনে এক রাতের মধ্যেই ৮৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রেকর্ড এ মৃত্যুসহ শনিবার পর্যন্ত ইউরোপের এ দেশটিতে কোভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২৮-এ পৌঁছায়। করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যায় স্পেনের চেয়ে এগিয়ে কেবল ইতালি। দেশটিতে কোভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারের ঘর অতিক্রম করেছে।

শনিবার স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৮ হাজারও ৭৯৭-এ দাঁড়িয়েছে। এক দিন আগেও এ সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ২৪৮।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা অতিক্রম করেছে ৩১ হাজার।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের বিস্তার বাড়ছেই

প্রতিদিন বিশ্বব্যাপী হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হুহু করে। বৈশ্বিক এই মহামারি সামলাতে বেকায়দায় পড়েছে বিশ্বের সব দেশ। চীনে প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও ভাইরাসটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে ১০ হাজার ২৩ জন। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৮৯। এদিকে ৫ হাজার ৯৮২ মৃত্যু নিয়ে স্পেনের অবস্থাও বিপর্যস্ত। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ হাজারের বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২২ হাজার আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ২ হাজার ৪৭ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে। করোনায় প্রাণহানিতে চীনকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে ইতালি ও স্পেন। স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৮৩২ জন। ফ্রান্সের অবস্থাও বেশ নাজুক। মৃত্যু ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৩১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন।

ইউরোপের প্রায় সব দেশ লকডাউন। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘরবন্দি। এ ধরনের লকডাউন চলছে এশিয়া, আফ্রিকাসহ অন্যানা মহাদেশেও। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসও।

অবস্থা খুবই মারাত্মক। কোনো ভৌগোলিক সীমানা মানছে না এই ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইরান, স্পেনসহ আরো অসংখ্য দেশের অর্ধশতাধিক প্রথম সারির নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। খোদ যুক্তরাষ্ট্র হাসপাতালের ডেব, মাস্ক আর ভেন্টিলেটর সংকটে পড়েছে। জাহাজকে হাসপাতাল বানিয়ে আজ নিউইয়র্কে পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। দেশটিতে সবচেয়ে বাজে অবস্থা জনবহুল নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের।

এশিয়ার অবস্থাও নাজুক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে এশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছে। ইরানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯-সহ সেখানে মৃত্যু হয়েছে আড়াই সহস্রাধিক মানুষের। প্রতিদিন আরো হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্টসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির অনেক আইনপ্রণেতা করোনায় আক্রান্ত। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও রয়েছেন।

তবে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব চীনের মধ্যাঞ্চলের প্রদেশ হুবেইয়ের রাজধানী উহানে শুরু হলেও সেখান থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। দেশটিতে নতুন করে স্থানীয়ভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা টানা কয়েকদিন ছিল না। যারা আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তারা সবাই বিদেশফেরত। তবে বিদেশফেরতদের মাধ্যমে আবার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করায় সেখানে দ্বিতীয় দফা করোনা ?‘বিস্ফোরণের’ শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ব্যাপকভাবে বিস্তার ছড়ানো দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে জার্মানির নামও। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৬৯৫ জন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩৩ জন মারা গেছেন, যা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৮২ জনের মৃত্যু হওয়ার পর আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানেও ভালোই মহামারি আকার ধারণ করবে করোনা।

যুক্তরাজ্যে করোনায় গত এক দিনে ২৬০ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে করোনায় সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মধ্যে নেদারল্যান্ডসে কোভিড-১৯ রোগে ৬৩৯ জন মারা গেছেন। এরই মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের। বেলজিয়ামে ৩৫৩ এবং সুইজারল্যান্ডে করোনায় ২৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। শতাধিক মৃত্যু হয়েছে ইউরোপের আরো অনেক দেশে।

প্রতিবেশী ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। দেশটিতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে ২৪ জন মারা গেছেন। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২১ দিন দেশ লকডাউন করে রেখেছে মোদি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫০০ ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ১২ জন। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮; এরই মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১৫ জন। চিকিৎসা চলছে ২৮ জনের।

ইরানে আরো ১২৩ জনের প্রাণ কাড়ল করোনা

ইরানের করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৬৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৩০৯ জনে পৌঁছেছে। গতকাল রোববার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা টুইটারে এ তথ্য জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে করোনার দ্রুত বিস্তার ঘটেছে ইরানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকার ব্যাপক ব্যবস্থা নিলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।

ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা আলী রেজা ভাহাবজাদেহ এক টুইটে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের দেশে নতুন করে আরো ১২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়া নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন আরো ২ হাজার ৯০১ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট করোনা-সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩০৯ জনে পৌঁছেছে। তিনি বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ১২ হাজার ৩৯১ জন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুর বলেছেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৬৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে, দেশে করোনায় আক্রান্ত ১২ হাজার ৩৯১ জন মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যারা মারা গেছেন, তাদের গড় বয়স ৬৯ বছর।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসের প্রথম বিস্তার ঘটে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৭০৫, মারা গেছেন ৩১ হাজার ৭৩৭ এবং সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৯ জন। এ মুহূর্তে করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রে; ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৮১ জন। যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন ২ হাজার ২২৯ জন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close